মুমিনের বৈশিষ্ট্য

মুমিনের পরিচয় : যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ রাববুল আলামীনের একত্ববাদে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে বিশ্বাস স্থাপন করে তার প্রতি বাণী মেনে চলে ও  সে অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করে তাকেই মুমিন বলে। অন্যভাবে বলা যায় মহান আল্লাহ তায়ালা, তার প্রেরিত নবী, রাসূল, ফিরিশতা, কিতাব, পরকাল ও তকদীরের প্রতি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে বিশ্বাস স্থাপন করে আর ঈমান গ্রহণের পর যে ব্যক্তি ঈমান থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি তিনিই মুমিন।

মুমিনের বৈশিষ্ট্য : মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীম ও পবিত্র হাদীস শরীফে মুমিনের চারিত্রিক সনদ অর্থাৎ যে বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে তা নিম্নে পেশ করা হল :

১. সন্দেহমুক্ত জীবন যাপন : মুমিন আল্লাহর রুবুবিয়াতের উপর ঈমান আনার পর আর কখনো সন্দেহে পড়ে না। সে পূর্ণতার সাথে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার উপর আস্থাশীল। যেমন মহান আল্লাহ পাক সোবহানাহু তায়ালা বলেন- ‘‘প্রকৃত মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহে পড়ে না এবং নিজেদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, এরাই সত্যবাদী।’’ (সূরা হুজরাত-১৫)

২. মুমিন মহববত ও দয়ার প্রতীক : মুমিন জিন্দেগীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মহববত ও দয়া। এ জন্য মুমিনকে মহববত ও দয়ার প্রতীক বলা হয়। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই সৎকর্মশীল মুমিনদের জন্য দয়াময় আল্লাহ তাদের জন্য (মানুষের অন্তরেও) মহববত পয়দা করে দেন। (মরিয়ম-৯৬) যেমন আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন-‘‘মুমিন মহববত ও দয়ার প্রতীক। ঐ ব্যক্তির মধ্যে কোন কল্যাণ নেই , যে কারো সাথে মহববত রাখে না এবং মহববত প্রাপ্ত হয় না’’ (হযরত আবু হুরায়রা -মুসনাদে আহমাদ) অবশ্যই এই ভালবাসা হবে নিতান্তই আল্লাহর জন্য। অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে ‘‘ঐ ব্যক্তি তার ঈমানকে দৃঢ় করল যে কাউকে ভালবাসল আল্লাহর জন্য, কাউকে ঘৃণা করল আল্লাহর জন্য, কাউকে কোন কিছু দিল আল্লাহর জন্য আর কাউকে কোন কিছু দেয়া হতে বিরত থাকল কেবল আল্লাহর জন্য’’। (তিরমিযী)

৩. মুমিন আল্লাহর ভয়ে ভীত : মুমিন তার অন্তরে সার্বক্ষণিক আল্লাহ তায়ালার ভয় লালন করে বিধায় শয়তান তার উপর গালিব হতে পারে না, এবং সে আল্লাহর উপর এমন আস্থাশীল যে, কোন বিপদও তাকে আল্লাহর বিধান থেকে গাফিল করতে পারে না, বরং তার ঈমানের জযবা আরো বেড়ে যায়। মহান রাববুল আলামীন ইরশাদ করেন-প্রকৃত মুমিন তারা যারা আল্লাহর স্মরণে তাদের দিল কেঁপে উঠে, তাদের সামনে আল্লাহর বাণী উচ্চারিত হলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়, তারা আল্লাহর উপর আস্থাশীল ও নির্ভরশীল হয়ে থাকে। নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহর প্রদত্ত রিযিক থেকে ব্যয় করে। বস্তুত: এরা হচ্ছে সত্যিকারের মুমিন। তাদের জন্য আল্লাহর নিকট উচ্চ মর্যাদা রয়েছে আরো রয়েছে  অপরাধের ক্ষমা ও অতি উত্তম রিযিক (আনফাল-২-৪)

৪. মুমিন আল্লাহর ফায়সালার পূর্ণ অনুগামী : মুমিন তার ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সামষ্টিক জীবনে আল্লাহর বিধান ও ফায়সালার খিলাফ করে না এবং জমিনে আল্লাহর বিধান ও ফায়সালার বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে ‘‘মুমিনদের বৈশিষ্ট্য এই যে, যখন তাদের মাঝে ফয়সালার জন্য আল্লাহ ও রাসূলের (বিধানের) প্রতি ডাকা হয়, তখন তারা বলে আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম, আর এইরূপ লোকেরা প্রকৃত সফলকাম’’। (সূরা আন নুর-৫১)

৫. মুমিন আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তিপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী :  মুমিন জিন্দেগীতে আল্লাহর স্মরণ, আল্লাহর বিধানের অনুসরণ তাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে, সে আরো অধিক হারে আল্লাহর বিধানের পায়বন্দিতে আগ্রহী হয়। যেমন মহান আল্লাহপাক সূরা রাদের ২৮ আয়াতে ইরশাদ করেন-‘‘যারা মুমিন আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর পরম শান্তি ও স্বস্তি লাভ করে থাকে’’।

৬. মুমিন আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী : মুমিন আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার রহমাতের ছায়ার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠি। তারা আল্লাহর হুকুমের যথাযথ অনুসরণের দরুন আল্লাহ তার রহমত দ্বারা তাদের বেষ্টন করে রাখেন। সূরা তাওবার ৭১ আয়াতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-‘‘মুমিন নারী পুরুষরা তারা পরস্পরের বন্ধু ও সাহায্যকারী। তারা একে অপরকে যাবতীয় ভাল কাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, যাকাত পরিশোধ করে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে। উহারা এমন লোক যাদের প্রতি আল্লাহর রহমত অবশ্যই নাযিল হবে।’’

৭. মুমিনগণ আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী : মহান আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা মুমিনদের একমাত্র সাহায্যকারী এবং যথাযথ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত মুমিন জনশক্তিই আল্লাহর সাহায্যের একমাত্র হকদার। সূরা আর রুমের ৪৭ আয়াতে ইরশাদ হয়েছে ‘‘অতপর আমি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছি আর মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।’’ অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- ‘‘হে ঈমানদারগণ তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের স্থীতি ও প্রতিষ্ঠাদান করবেন।’’ (সূরা মুহাম্মদ-৭)

৮. মুমিনরাই বিজয়ী জনগোষ্ঠী : সত্যিকার মুমিনরা দুনিয়া ও  আখিরাতের একমাত্র সফলকাম জনগোষ্ঠি। মুমিন জিন্দেগীর শর্তপূর্ণতা দানকারীদের আখিরাতের সফলতার পাশাপাশি দুনিয়াতে ও বিজয় দান করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা ভীত হয়োনা, চিন্তিত হয়োনা, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা সত্যিকারের মুমিন হয়ে থাক (আলে ইমরান-১৩৯)

৯. মুমিনদের একমাত্র পৃষ্ঠপোষক আল্লাহ : আল্লাহ সোবহানাহুতায়লা স্বয়ং মুমিনদের একমাত্র পৃষ্ঠপোষক যদ্দরুন বাতিলের গর্জন হুংকারকে তারা পরোয়া না করে আল্লাহর রুাবিয়াহ প্রতিষ্ঠায় সার্বক্ষণিক তৎপর। এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেন লোকেরা যখন তাদেরকে (মুমিনদের) বলে তোমাদের বিরুদ্ধে সমর সজ্জিত বিরাট বাহিনী সমবেত হয়েছে। তখন একথা শুনে তাদের ঈমান আরো বেড়ে যায় এবং তারা বলে (কাফেরদের বিরুদ্ধে) আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি সর্বোত্তম কর্মকর্তা। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ মুমিনদের পৃষ্ঠপোষক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আনেন। (বাকারা ২৫৭)

১০. মুমিনরা ভীতিমুক্ত শান্তি ও নিরাপত্তার বেষ্টনীতে আবদ্ধ জনগোষ্ঠী : মহান আল্লাহপাক পবিত্র কালামে ইরশাদ করেন- তোমাদের মধ্যে সত্যিকার মুমিন ও সৎকর্মশীলদের জন্য আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে, তাদের পৃথিবীতে খিলাফতদান করবেন, যেমনিদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তী মুমিনদেরকে। আর তিনি তাদের জন্য যে দ্বীন পছন্দ করেছেন অবশ্যই তার প্রতিষ্ঠাদান করবেন এবং তাদের ভীতিজনক অবস্থাকে শান্তি ও নিরাপত্তার পরিণত করবেন। (সূরা আন নুর ৫৫)

১১. মুমিনরা দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতিষ্ঠিত জনগোষ্ঠী : প্রকৃত মুমিনদের দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে আল্লাহপাক ওয়াদাবদ্ধ। সূরা ইবরাহিম ২৭ আয়াতে ইরশাদ হয়েছে ‘‘মুমিনদের কে আল্লাহ এক সুপ্রমাণিত কথার ভিত্তিতে দুনিয়া ও আখিরাতের উভয় স্থানে প্রতিষ্ঠা দান করেন আর যালিমদেরকে করে দেন বিভ্রান্ত এবং তিনি যা ইচ্ছে করেন তা করার ইখতিয়ার তাঁর রয়েছে।’’ সূরা আনু নুরের ৫৫নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে ‘‘তোমাদের মধ্যে সত্যিকার মমিন ও সৎকর্মশীলদের জন্যে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে খিলাফত দান করবেন।’’

১২. মুমিনরাই জান্নাতের একমাত্র হকদার : আল্লাহপাক সূরা আহযাবের ৪৭ আয়াতে বলেন- হে নবী মুমিনদের সুসংবাদ দিন যে, আল্লাহর তরফ থেকে তাদের জন্যে অনেক অনুগ্রহ রয়েছে। আর এই অনুগ্রহরাজির মধ্যে সর্বোচ্চ অনুগ্রহ হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুুষ্টিলাভ ও জান্নাতের সর্বোত্তম হকদার হওয়া এবং এটাই মুমিনদের আসল সফলতা। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে ‘‘এই মুমিন পুরুষ-নারীদের সম্পর্কে আল্লাহর ওয়াদা এই যে, তাদেরকে এমন বাগবাগিচা দান করবেন যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান চিরকাল তারা তা উপভোগ করবে, এই চির সবুজ শ্যামল জান্নাতে তাদের জন্যে রয়েছে পবিত্র পরিচ্ছন্ন বসবাসের স্থান, আল্লাহর সন্তোষ লাভ করে তারা হবে সৌভাগ্যবান আর এ হবে তাদের বড় সাফল্য’’। (সূরা আত তাওবা ৭২) সূরা নিছার ৫৭ আয়াতে বলা হয়েছে ‘‘সৎ কর্মশীল মুমিনদের আমি এমন জান্নাত প্রবেশ করাবো যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান। চিরকাল তারা তা উপভোগ করবে সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গীনারীও রয়েছে। আমি তাদের ঘন নিবিড় ছায়ার আশ্রয়দান করবো।’’ অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে ‘‘এরাই হচ্ছে সেই উত্তরাধিকারী তারা ফেরদাউসের ওয়ারিশ হবে এবং চিরকাল সেখানে থাকবে।’’ (মুমিনুন ১০)

১৩. মুমিনরা নামাযের সংরক্ষণকারী : মহান আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার ইবাদতের ও তাঁর সাথে গভীর সম্পর্কের প্রধান মাধ্যম হল সালাত। আর যারা মুমিন তারা আল্লাহ সিজদায় নিজেকে উৎসর্গী করে এক্ষেত্রে কোন প্রকার গাফিলতা প্রদর্শন করে না। সূরা মুমিনুন ২ আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘‘তারা তাদের সালাতে বিনয় অবলম্বন করে’’। একই সূরার ১০ আয়াতে বলা হয়েছে- ‘‘ যারা নিজেদের নামায সমূহকে পূর্ণভাবে সংরক্ষণ করে।’’

১৪. মুমিনরা আল্লাহর সীমা রক্ষাকারী ও তাঁর গোলামীর জীবনযাপনকারী : দুনিয়ায় মহান আল্লাহর রুবুবিয়াত প্রতিষ্ঠা এবং তার নির্ধারিত পথে জীবনযাপনই মুমিনদের একমাত্র মিশন। ইরশাদ হচ্ছে ‘‘তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, আল্লাহর গোলামীর জীবনযাপনকারী, তাঁর প্রশংসা উচ্চারণকারী, তার জমীনে পরিশ্রমণকারী, তাঁর সম্মুখে রুকু ও সিজদায় অবনত, ন্যায়ের নির্দেশদানকারী, অন্যায়ের বাধাদানকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারক্ষাকারী, হে নবী তুমি এসব মুমিনদের সুসংবাদ দাও। (তাওবা- ১১২)

১৫. মুমিনরা আল্লাহ প্রদত্ত আমানতের রক্ষক : মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা হালাল-হারামকে মুমিনদের নিকট আমানত রেখেছে। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) যা করতে বলেছেন তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিঃশর্তে গ্রহণ করবে, আর যা নিষেধ করেছেন তাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বর্জন করবে আর এটাই মুমিনদের অনুসৃত একমাত্র নীতি। এই কারণেই মুমিনরাই আল্লাহ প্রদত্ত আমানতের একমাত্র রক্ষক। ইরশাদ হচ্ছে ‘‘যারা (অর্থাৎ মুমিনরা) আমানত ও ওয়াদা চুক্তির রক্ষণাবেক্ষণ করে।’’ (মুমিন-৮) সূরা আনফালের ২৭ আয়াতে বলা হয়েছে- ‘‘হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তোমাদের উপর ন্যস্ত আমানতের খিয়ানত করো না। অথচ তোমরা এর গুরুত্ব জান।’’

আসলে মুমিন চরিত্রে খিয়ানতের কোন স্থান নেই, সে বরাবরই রক্ষক হবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যদি তোমার মধ্যে চারটি জিনিস থাকে তবে পার্থিব কোন জিনিস হাতছাড়া হয়ে গেলেও তোমার ক্ষতি হবে না। ১. আমানতের হিফাজত; ২. সত্য ভাষণ; ৩. উত্তম চরিত্র; ৪. পবিত্র রিযিক।’’ (আহমাদ) অন্য হাদীসে বলা হয়েছে- হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি নবী করিম (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন- যে ব্যক্তি তোমার নিকট আমানত রেখেছে তার আমানত তাকে ফেরৎ দাও যে ব্যক্তি তোমার আমানত আত্মসাৎ করে তুমি তার আমানত আত্মসাৎ করো না।’’ (তিরমিজী, আবুদাউদ)

মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্টই আমানতের রক্ষণাবেক্ষণকারী। মুমিন কখনো খায়িন হতে পারে না। খায়িন হওয়াইটাই মুমিন চরিত্রের সরাসরি বরখিলাপ।

১৬. মুমিনরা কৃত ওয়াদার সংরক্ষণকারী : মুমিন তার কৃত ওয়াদাপালনে সার্বক্ষণিক তৎপর ওয়াদার খিলাফ মুমিন চরিত্রের স্থান নেই। তাই মহান আল্লাহ সুবহানা তায়ালা সূরা মুমিনুনে মুমিনের চরিত্র বর্ণনায় বলেন- তারা আমানত ও ওয়াদার চুক্তির রক্ষণাবেক্ষণকারী (মুমিনুন ৮) আর ওয়াদার ব্যাপারে আল্লাহ পাকের সুস্পষ্ট নির্দেশনা হল- হে ঈমানদারগণ তোমরা চুক্তিসমূহ পূরণ কর। (মায়িদাহ ১) সূরা নাহলের ৯১ আয়াতে বলা হয়েছে ‘‘আল্লাহর নামে অঙ্গিকার করার পর সে অঙ্গিকার পূর্ণকর এবং পাকাপাকি কসম করার পর তা ভঙ্গ করো না অথচ তোমরা আল্লাহকে জামিন করেছ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।’’ হযরত আবু হুবায়রা (রাঃ) হবে বর্ণিত আল্লাহ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে ২. যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে ৩. তার নিকট কোন আমানত রাখা হলে তা খিয়ানত করে (বুখারী মুসলিম)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন- যার মধ্যে চারটি দোষ পাওয়া যায় সে খাঁটি মুনাফিক ১. তার নিকট আমানত রাখা হলে তার খিয়ানত করে; ২. কথা বললে মিথ্যা বলে; ৩. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে ৪. ঝগড়ায় লিপ্ত হলে গালি-গালাজ করে (বুখারী-মুসলিম)।

এখানে স্পষ্টত মুমিন কখনো ওয়াদা ভঙ্গকারী হতে পারে না বরং সে ওয়াদার পূর্ণ হিফাজতকারী। একদিন এক সাহাবী আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে এক স্থানে দাঁড় করিয়ে বললেন আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি আসছি রাসূল (সাঃ) ও সায় দিলেন ঐ সাহাবী বাড়ি গিয়ে ভুলে গেলেন এবং তিনদিন পর এসে দেখলেন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ঠিকই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। আর এটাই মুমিন চরিত্রের রোল মডেল।

১৭. মুমিন সর্বকাজে সবরের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনকারী : পরিবর্তিত পরিবেশ পরিস্থিতিতে নিজের মন মিজাজকে পরিবর্তন না করা বরং সর্বাবস্থায় এক সুস্থ যুক্তিসঙ্গত ন্যায় আচরণ করে চলাই সবর। সবর মুমিনের সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যের একটি, এটি মুমিনের কাজ কর্মকে মহান রবের নিকট আকর্ষণীয় করে তোলার পাশাপাশি পার্থিব জগত ও ইহ জগতে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করে। সবর সম্পর্কে মহান আল্লাহ সূরা মাযারিজ ৬ আয়াতে ইরশাদ করেন, অতএব সবর করো সবরে জামিল। সূরা ইউনুসে ১০৯ আয়াতে বলা হয়েছে, তুমি কেবল তাই অনুসরণ কর যা অহীর মাধ্যমে তোমার কাছে পাঠানো হয়েছে আর সবর অবলম্বন করতে থাক, যতক্ষণনা আল্লাহ চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেন।’ সবর মানুষকে চারিত্রিক মযবুতি দানের পাশাপাশি মানুষের কৃত গুনাহ মাফ করে তাকে পরিশুদ্ধ শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত করে। এই প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন ‘কোন মুসলিম ব্যক্তি মানসিক বা শারীরিক কষ্ট পেলে কোন শোক বা দুঃখ পেলে অথবা চিন্তাগ্রস্ত হলে সে যদি সবর করে তাহলে আল্লাহ প্রতিদান স্বরূপ তার সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন। এমনকি যদি সামান্য একটি কাটাও পায়ে বিঁধে তাও তার গুনাহ মাফের কারণ হয়ে দাঁড়ায় (বুখারী মুসলিম)।

অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি সবরের চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে সবরের শক্তি প্রদান করবেন। আর সবর হতে অধিক উত্তম ও ব্যাপক কল্যাণকর বস্তু আর কিছুই কাউকে দান করা হয়নি। (আবু সাঈদ খুদরী (রা.)-বুখারী মুসলিম।

দ্বীনের দায়ীদের কাফিরদের শত উৎপীড়ন নির্যাতনে ভেঙে পড়লে দ্বীনের মহান টার্গেট থেকে বিচ্যুতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুহাম্মদ সবরের সাথে কাজ করতে থাক, তোমার এই সবরের তাওফিকতো আল্লাহই দিয়েছেন, ওদের কার্যকলাপে তুমি দুঃখিত চিন্তিত হয়ো না এবং তাদের ষড়যন্ত্র ও কূটকৌশলের দরুণ মন ভারাক্রান্ত করো না’ (সূরা নাহল ১২৭)। সূরা আনআমের ৩৪ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুহাম্মদ তোমার পূর্বেও অসংখ্য রাসূলদের অমান্য করা হয়েছে। কিন্তু এই অস্বীকৃতি ও যাবতীয় জ্বালাতন নির্যাতনের মোকাবিলায় তারা সবর অবলম্বন করেছেন। অবশেষে তাদের প্রতি আমার সাহায্য এসে পৌঁছেছে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ারা মাঝে মাঝে তাঁর বান্দাদের বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন কে সত্যিকারে সবরকারী এবং এর মাধ্যমে বান্দাকে পরিশুদ্ধ করে তার সান্নিধ্যদান করেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত এক হাদীসে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, মুমিন নরনারীর ওপর সময় সময় বিপদ ও পরীক্ষা এসে থাকে কখনো সরাসরি তার ওপর বিপদ আসে, কখনো তার সন্তান মারা যায়, আবার কখনো বা তার ধন সম্পদ বিনষ্ট হয়। আর সে এ সকল মুসিবতে সবর করার ফলে তার কলব পরিষ্কার হতে থাকে এবং পাপ হতে মুক্ত হতে থাকে। অবশেষে সে নিষ্পাপ আমলনামা নিয়ে আল্লাহর সাথে মিলিত হয়। (তিরমিযী)। হযরত উমার (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যে সমস্ত বস্তুর ঢোক গিলে তন্মধ্যে রাগের বা গোস্বার সেই ঢোকটিই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম, সেটি আল্লাহকে সন্তুষ্টি রাখার জন্য মানুষ গ্রহণ করে থাকে। মুমিন সকল প্রকার বিপদ-মুসিবতে, অভাব-অনটনে, দুঃখ-কষ্টে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির মহান লক্ষ্যে সবর করে তখনই সে অভূত পূর্ব সাফল্য ও কল্যাণ লাভ করে। আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুমিনের সকল কাজ বিস্ময়কর, তার প্রতিটি কাজই তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, আর এই সৌভাগ্য মুমিন ছাড়া কেউই লাভ করতে পারে না। দুঃখ-কষ্টে নিমজ্জিত হলে সে সবর করে আর এটা হয় তার জন্য কল্যাণকর। সুখ শান্তি লাভ করলে সে শোকর আদায় করে আর এটাও তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। (মুসলিম)।

১৮. মুমিন আল্লাহর কাছে বাইআতবদ্ধ : মুমিনরা আল্লাহর নিকট বাইয়াত জনগোষ্ঠী। তারা জান্নাতের বিনিময়ে আল্লাহর নিকট তাদের মাল এবং জানকে বিক্রি করে দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে খরিদ করে নিয়েছেন, এখন তাদের কাজ হবে তারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে, সে সংগ্রামে তারা যেমন মারবে তেমন মরবেও (তাওবা১১১)। হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রাক্কালে মুসলিম উম্মাহ দ্বীন রক্ষাসহ দ্বীনের দায়ীদের যে সুদৃঢ় ইস্পাতসম বাইআত গ্রহণ করে সেই বাইআত ছিল মূলত মহান মাবুদের সাথে। ইরশাদ হচ্ছে হে রাসূল! যেসব লোক আপনার নিকট বাইআত হচ্ছিল তার আসল আল্লাহর নিকট বাইআত হচ্ছিল। তাদের হাতের ওপর আল্লাহর কুদরতের হাত ছিল। (ফাতহ ১০) একই সুরার ১৮ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে রাসূল আল্লাহ মুমিনদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নিচে আপনার নিকট বাইআত হচ্ছিল (ফাতাহ ১৮)। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যেহেতু মানুষকে খিলাফতের মহান যিম্মাদারী দিয়েই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন আর এই খিলাফতের অতন্দ্র প্রহরীই মুমিনরা। সুতরাং মহান মাবুদের দেয়া যিম্মাদারী পালন দ্বীন প্রতিষ্ঠার মহান লক্ষ্যে অবশ্যই মুমিনরা হবে বাইআতবদ্ধ সুদৃঢ় জনগোষ্ঠী। বর্তমান দুনিয়াতে বিশেষ করে আমাদের দেশে পীর মুরিদী সিস্টেমের নিছক বাইআত নয়। বাইআত হবে দ্বীনের সহীহ চেতনাসম্পন্ন মুসলিম উম্মাহ নেতৃত্বদানকারী সংগঠন, যারা নবী রাসূলগণের উত্তরসূরী দুনিয়াকে জঞ্জালমুক্ত করে আল্লাহর জন্য আবাদ করার সুমহান লক্ষ্যে কাজ করছে। বাইআত হবে খোদাদ্রোহি শাসন ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করে খোদায়ী শাসন প্রতিষ্ঠা, বাইআত হবে জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুমের অধিকার প্রতিষ্ঠা বিষয়ে। সামগ্রিকভাবে বাইআতবিহীন জিন্দেগীকে জাহিলিয়াতের জিন্দেগীর সাথে তুলনা করা হয়েছে। হযরত উমার (রা.) রাসূল পাক (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি বাইআত ছাড়াই মৃত্যুবরণ করল সেই জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (মুসলিম) সাহাবায়ে কিরাম আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর হাতে নিছক কতগুলো আমলের বাইআত গ্রহণ করেননি তারা দ্বীনের সামগ্রিক বিষয়ে বাইয়াত গ্রহণ করেন। এই প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে দিনার (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)কে বলতে শুনেছেন যে, তিনি আমাদের সমর্থানুযায়ী আমল করার অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম) অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, আমরা আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর কাছে বাইআত গ্রহণ করেছি শ্রবণ ও আনুগত্যের ব্যাপারে এবং এটা স্বাভাবিক অবস্থা, কঠিন অবস্থা আগ্রহ ও অনাগ্রহ সর্বাবস্থায়ই প্রযোজ্য। আমরা আরো বাইআত গ্রহণ করেছি যে, আমরা কোন দায়িত্বশীলদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবো না এবং সর্বাবস্থায় সত্যের পর প্রতিষ্ঠিত থাকবো। এ ব্যাপারে কোন তিরষ্কারকারীর তিরষ্কারকে ভয় করব না। (নাসায়ী : রাবী হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) আলোচ্য হাদীসে রাসূল (সা.)-এ বাইআতের মুখ্য বিষয় বর্ণনা করেছেন। আর মুমিন সর্বাবস্থায় দ্বীন প্রতিষ্ঠার অতন্দ্র প্রহরীর মহান জিম্মাদারী পালনে নির্ভরযোগ্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মূলত মহান রবের নিকট বাইআতবদ্ধ হবে।

১৯. মুমিন বিনয়ী ও নম্র : বিনয় ও নম্রতা মুমিন চরিত্রের অন্যতম উত্তম ভূষণ যার সর্বোত্তম নমুনা মানবতার মহান শিক্ষক নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামগণ। যাদের বিনয়ী আচরণ গোটা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেয়। যারা বিনয়ী নম্র তারা আল্লাহর পরম বন্ধু আর আল্লাহ তাদের ভালবাসেন। কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে হে ঈমানদারগণ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি নিজের দ্বীন থেকে ফিরে যায় আল্লাহ আরো এমন লোক সৃষ্টি করবেন যারা হবে আল্লাহর প্রিয় এবং আল্লাহ হবেন তাদের নিকট প্রিয়। যারা মুমিনদের প্রতি নম্র ও বিনয়ী হবে এবং কাফেরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর। (সূরা মায়েদা-৫৪)।

সূরা আশশূরায় ২১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘যারা তোমার অনুসরণ করে সে সকল বিশ্বাসীদের প্রতি বিনয়ী হও’’। বিনয় নম্রতা মানুষকে আশরাফ তথা মর্যাদাবান করে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, দানের দ্বারা সম্পদ কমে না, ক্ষমার দ্বারা আল্লাহ বান্দাদের ইজ্জত ও সম্মান বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কিছু করে না, আর যে একমাত্র আল্লাহরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বিনয় ও নম্রতার নীতি অবলম্বন করে, আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন, ‘‘(মুসলিম)

অন্য হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ আমার নিকট অহী পাঠিয়েছেন তোমরা পরস্পরের সাথে বিনয় নম্রতার আচরণ কর। যাতে কেউ কারো ওপর গৌরব না করে এবং একজন আরেকজনের ওপর বাড়াবাড়ি না করে’’। (মুসলিম)

২০. মুমিন তাকওয়ার উজ্জ্বল নমুনা : মুমিন হলো তাকওয়ার জ্বলন্ত উজ্জ্বল নমুনা। তাকওয়ার মাধ্যমে মুমিন নিজেকে সম্মানিত করে রাহমানের বান্দাহর উপযোগিতা অর্জন করে। মহান আল্লাহ সোবহানাহুতায়ালা সূরা হুজরাত ১৩ আয়াতে ইরশাদ করেন ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালার নিকট তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যিনি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক তাকওয়ার অধিকারী, নিঃসন্দেহে আল্লাহ সকল কিছু জানেন এবং সব বিষয়ে অবহিত।’’ হযরত আবু জার গিফারী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা রাসূলে কারিম (সা.)-এর খেদমতে হাজির হলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল আমাকে নসীহত করুন। নবী মুহাম্মাদুর রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাকে নসীহত করছি তুমি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। কেননা, ইহা তোমার সমস্ত কাজকে সুন্দর, সুষ্ঠু ও সৌন্দর্যমন্ডিত করে দিবে …..।’’ (বায়হাকী শুআবিল ঈমান)।

তাকওয়া মুমিনকে আখেরাত অনুগামী করে। দুনিয়াবী চিন্তার ওপর আখেরাতের চিন্তার প্রাধান্য পায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে পাকের সূরা হাশরের ১৮ আয়াতে বলা হয়েছে-‘‘হে মুমিনরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন লক্ষ্য করে যে, সে আগামী দিনের জন্য কি সামগ্রীর ব্যবস্থা রেখেছে। আল্লাহর তাকওয়া অর্জন কর। আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের সেসব আমল সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা কর।’’ অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘হে মুমিনগণ আল্লাহকে ভয় কর, তাঁকে যেরূপ ভয় করা উচিত। তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’’ (আল-ইমরান-১০২) তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নাফরমানী পর্যায়ে পড়ে এমন কাজ হতে দূরে থাকা যায়। ইরশাদ হচ্ছে আর সফলকাম ঐ সমস্ত লোকেরা যারা আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম পারন করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং নাফরমানী হতে দূরে থাকে।’’ (নূর-৫২)।

২১. মুমিন আল্লাহর ওপর পূর্ণ তায়াক্কুলকারী : মুমিন তার জীবনের সামগ্রিক বিষয়ে একমাত্র মহান আল্লাহ রাববুল আলামীনকে অভিভাবক মনে করে সম্পূর্ণরূপে তার ওপর তায়াক্কুল করে। হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকার নাম আল্লাহর ওপর তায়াক্কুল নয়। বরং মহান আল্লাহর দেয়া সকল সুযোগ-সুবিধা ও উপায় উপকরণসমূহ কাজে লাগিয়ে ফলাফলের জন্য তাঁর ওপর নির্ভর করা হচ্ছে সত্যিকার তায়াক্কুল। হযরত আনাস (আ.) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বললো হে রাসূল (সা.) আমি উট বেঁধে রেখে আল্লাহর ওপর ভরসা করবো না বন্ধনমুক্ত রেখে? তিনি বললেন, উট বেঁধে নাও তারপর আল্লাহর ওপর ভরসা কর। (তিরমিযী)।

পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে ‘‘আমাদের জন্যই আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই সর্বোত্তম কর্মকর্তা। (আল-ইমরান-১৭৩) সূরা যুমারের ৩৮ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘হে রাসূল বলুন, আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট তায়াক্কুলকারীরাই তাঁর ওপর নির্ভর করে।’’ এক্ষেত্রে মুমিন নিজেকে মহান মাবুদের নিকট পূর্ণরূপে সপে দিবে, কারণ পৃথিবীতে মূলত তার কোন ক্ষমতা নেই সে সম্পূর্ণ পৃথিবীর একচ্ছত্র অধিপতি মহান আল্লাহর আয়ত্তাধীন। কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে, আমি আমার ব্যাপার আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছি নিশ্চয়ই বান্দাহরা আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছি। (মুমিন ৪৪) সূরা হুদের ৫৬ আয়াতে বলা হয়েছে’’।

আমি আল্লাহর ওপর নিশ্চিত তায়াক্কুল করেছি যিনি আমার এবং তোমাদের পরওয়ারদিগার। পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই যা তার পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়।’’ দুনিয়ার সকল কার্য নির্বাহের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন তাই মুমিনরা তার ওপরই আস্থাশীল তাকেই অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তার ওপর তায়াক্কুল করে। সূরা ইউসুফ ১০১ আয়াতে বলা হয়েছে ‘‘আপনিই আমার ওয়ালী (অভিভাবক) ইহকাল ও পরকালের, আমাকে ইসলামের ওপর মৃত্যুদান করুন এবং আমাকে স্বজনদের সাথে মিলিত করুন, এখানে উল্লেখ্য যে, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ তায়াক্কুল করবে আর মহান আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার তার জন্য যথেষ্ট এবং তার একমাত্র অভিভাবক হয়ে যান। সূরা আহযাবের ৩ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘আপনি আল্লাহর ওপর ভরসা করুন, কার্যনির্বাহীরূপে আল্লাহ যথেষ্ট।’’ অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তায়াক্কুল করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। (তালাক-৩) তায়াক্কুলের ব্যাপারে সর্বোপরি কথা হলো, তিনিই তোমাদের মালিক, অতএব তিনি কতই না উত্তম মালিক এবং কতই না উত্তম সাহায্যকারী। (হজ্ব-৭৮)

সর্বোপরি কুরআন-সুন্নাহ বর্ণিত মুমিন জিন্দেগীর সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যমন্ডিত জীবন যাপনের মাধ্যমে কেয়ামতের কঠিন বিপদের মুহূর্তে মহান আল্লাহ সোবানাহু তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন ও জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি প্রাপ্ত সফলকাম উম্মাহর গর্বিত সদস্য হওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি মহান মাবুদের দরবারে সার্বক্ষণিক এ পথে অনড় থাকার তৌফিক কামনা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সফল মুমিন হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

মো. আনোয়ার হোসেন ফারুক

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88