মালালা ও নাবীলা : ইতিহাসের দু’টি ভিন্ন চিত্র

মালালা ও নাবীলা : ইতিহাসের দু’টি ভিন্ন চিত্র

গত ১০ই অক্টোবর সুইডেনের নোবেল কমিটি পাকিস্তানের ১৭ বছরের তরুণী মালালা ইউসুফযাইকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে। মালালা হ’ল এযাবৎকালের সর্বকনিষ্ঠ এবং পাকিস্তানের দ্বিতীয় নোবেল জয়ী। মালালা শান্তির জন্য কি কাজ করেছে যে, তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে? এরূপ এক প্রশ্নের উত্তরে নোবেল কমিটির সভাপতি বলেন, ‘বয়সে তরুণ হলেও গত কয়েক বছর যাবৎ তিনি নারীশিক্ষার অধিকার আদায়ে লড়াই চালিয়ে আসছেন। শিশু ও তরুণদের সামনে তিনি এই নযীর গড়েছেন যে, নিজেদের অবস্থার উন্নয়নে তারাও অবদান রাখতে পারে। আর এ লড়াই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন সবচেয়ে বিপদসংকুল পরিস্থিতির মধ্যে থেকে’। তখন একজন সাংবাদিক বলেন, Aspirations but has’nt actually done anything  (স্রেফ আশাবাদ; কিন্তু বাস্তবে সে কিছুই করেনি)। একথা শুনে সভাপতির চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং তার মুখে কোন উত্তর ছিল না।

১৯৯৭ সালের ১২ই জুলাই পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার সিঙ্গোরা গ্রামে মালালার জন্ম। তার পিতা যিয়াউদ্দীন ইউসুফযাই এলাকায় একটি স্কুল চালাতেন। অতঃপর ২০১২ সালের ৯ই অক্টোবর স্কুলযাত্রী ১৫ বছরের মালালাকে তালিবানরা গুলি করে। যা তার মুখে ও মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব মিডিয়ায় তালেবানের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অতঃপর দেশে ও বিদেশে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে মালালা এখন যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে পিতার সঙ্গে অবস্থান করছে। বর্তমানে সে বিশ্ব মিডিয়ায় শীর্ষ নারী এবং সকলের নিকট অতি পরিচিত একটি নাম। মালালা সর্বদা অহিংস নীতির কথা বলছে। অথচ তার জন্মস্থানেই যে আরেক নোবেলজয়ী ওবামার হুকুমে প্রায় প্রতিদিনই ড্রোন হামলা হচ্ছে এবং তাতে প্রাণ হারাচ্ছে অগণিত নিরপরাধ নারী-শিশু, সে বিষয়ে মালালার কোন কথাই শোনা যাচ্ছে না। মালালার নোবেল প্রাপ্তির ৭ দিনের মাথায় ইস্রাঈলী সেনাবাহিনী গাযায় ১৩ বছরের এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছে। এমনকি গত জুলাইয়ে সর্বশেষ ইস্রাঈল-হামাস যুদ্ধে ওবামার দেওয়া অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যে ইস্রাঈল পাঁচ শতাধিক নিরপরাধ শিশুকে হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও মালালার কোন শব্দ শোনা যায়নি। তাহ’লে ব্যাপারটা আসলে কি?

এবার চলুন, ইতিহাসের আরেকটি চিত্র অবলোকন করি। মালালা গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ২৫শে অক্টোবর একই এলাকা পাকিস্তানের উত্তর ওয়াযীরিস্তানে ৯ বছরের শিশু নাবীলা তার ৬৭ বছরের দাদীর সাথে বাড়ীর পাশে নিজেদের ক্ষেত থেকে সবজি তুলছিল। এমন সময় মার্কিন ড্রোন বিমানের হামলায় দাদী নিহত হন ও নাবীলা গুরুতরভাবে আহত হয়। যাতে তার চোখ নষ্ট হয়ে যায়। অথচ এই মর্মান্তিক ঘটনা বিশ্ব মিডিয়ায় কভারেজ পায়নি। অতঃপর কিছুটা সুস্থ হয়ে নাবীলা পিতার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে যায় দাদী হত্যার বিচার চাইতে। মার্কিন কংগ্রেসের শুনানীতে প্রায় ৪৩০ জন সদস্যের মধ্য থেকে মাত্র ৫ জন আসেন নাবীলার কথা শুনতে। নাবীলার পিতা দোভাষীর মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্যে তার অভিযোগ পেশ করে বলেন, একজন শিক্ষক হিসাবে আমি আমেরিকানদের জানাতে চাই যে, আমার পরিবার ও সন্তানেরা কতই না ক্ষত-বিক্ষত’! এ সময় তার দু’চোখ বেয়ে অবিরল ধারে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল। নাবীলা প্রশ্ন করল, আমার দাদীর কি অপরাধ ছিল? পিনপতন নীরবতায় সেদিন উক্ত প্রশ্নের উত্তর কেউ দেয়নি। বরং মার্কিন আইন প্রণেতাগণ ও তাদের আদালত বিষয়টিকে চরম ভাবে ‘অবজ্ঞা’ করে এবং নাবীলা ও তার পরিবারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলাচলে বাধা-নিষেধ আরোপ করা হয়। সাংবাদিকদের সংস্পর্শে যাতে তারা যেতে না পারে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। উল্টা সেদেশের কথিত স্বাধীন গণমাধ্যম তাদের যুক্তরাষ্ট্রে আগমনকে ‘আন-ওয়েলকামড’ (অবাঞ্ছিত) বলে শিরোনাম করে।

মালালা ও নাবীলা একই স্থানের একই রকম মর্মান্তিক ঘটনার শিকার। অথচ বিশ্বব্যাপী তার প্রতিক্রিয়ায় বিপরীত দুই চিত্র দেখা গেল। এর কারণ, মালালা কথিত তালেবান আক্রমণের শিকার। যাকে প্রতীক করে বিশ্বব্যাপী পাশ্চাত্যের কথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধের’ বৈধতা দেওয়া যায়। পক্ষান্তরে নাবীলা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধের নায়কদের আসল চেহারা বিশ্বের সামনে উন্মোচন করে দিয়েছে। যা পাশ্চাত্য সর্বদা গোপন রাখতে চায়। মালালাকে নোবেল পুরস্কার ধরিয়ে দিয়ে পাশ্চাত্য অপশক্তি বছরের পর বছর ধরে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে তাদের অব্যাহত গণহত্যাকে আড়াল করতে চায়। ঠিক যেমন আফগানিস্তান দখলের অজুহাত সৃষ্টির জন্য তারা ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে নিজেরা বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র ধ্বংস করে দিয়ে তালেবানের উপর দোষ চাপায়। অতঃপর তালেবানের কেন্দ্রস্থল আফগানিস্তানে হামলা চালায়। অথচ এই তালেবান তাদেরই সৃষ্টি।

মালালা কে? পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক ডন পত্রিকায় ২০১৩ সালের ১১ই অক্টোবর সংখ্যায় Malala : The real story (with evidnce) ‘মালালা : আসল কাহিনী (সাক্ষ্য-প্রমাণসহ)’ শিরোনামে যে অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, তাতে বলা হয় যে, মালালা পাকিস্তানী মুসলিম মেয়ে নয়, বরং ১৯৯৭ সালে পূর্ব ইউরোপের হাঙ্গেরীতে তার জন্ম এক খ্রিষ্টান মিশনারী পরিবারে। তার আসল নাম ‘জেন’। ২০০২ সালে তার পিতা-মাতা তাকে নিয়ে পাকিস্তানের সোয়াত ভ্রমণে আসেন এবং মালালার বর্তমান পিতা-মাতা গোপনে খ্রিষ্টান হয়ে যাওয়ায় পুরস্কার স্বরূপ তাদেরকে ঐ মিশনারীর পক্ষ হতে জেন-কে দান করা হয়। অতঃপর ‘জেন’ হয়ে যায় ‘মালালা ইউসুফযাই’। তারা জেন-এর বর্তমান উচ্চাভিলাষী পিতা যিয়াউদ্দীন ইউসুফযাইকে তাদের স্বার্থে কাজে লাগায় এবং মালালা ও তার কথিত পিতাকে দিয়ে তালেবানদের বিরুদ্ধে নানাবিধ কল্পকথা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশ করতে থাকে। এভাবে তাদের পরিচিতি তুঙ্গে উঠলে মালালাকে গুলি করা হয় কথিত তালেবানকে দিয়ে। কিন্তু মালালা মরে না। চিকিৎসার নামে তাকে ও তার পরিবারকে উড়িয়ে নেয়া হয় আমেরিকায়। অতঃপর সে এখন হয়ে গেল শান্তিতে নোবেল জয়ী। কি চমৎকার নাটক! আসলে কি তালেবান তাকে গুলি করেছিল? ঐ শ্যূটারের ডিএনএ টেস্ট করে দেখা গেছে যে, সেও মালালার মত বিদেশী রক্তের অধিকারী। সম্ভবতঃ ইতালীর লোক। যাকে দক্ষ তালেবান সাজিয়ে এই হামলা করানো হয়েছে। যাতে মালালা না মরে। অথচ কার্যসিদ্ধি হয়ে যায়। রিপোর্টে বলা হয়, পাকিস্তানী ও মার্কিন গোয়েন্দা এজেন্সীগুলি যৌথভাবে এই নাটক মঞ্চস্থ করে। ডন-এর এই অনুসন্ধানী রিপোর্টে বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলি এ বিষয়ে নীরব থাকে। এমনকি নোবেল পুরস্কার পেতেও তাতে বাধা হয়নি। পাকিস্তানের একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুলতানের জামশেদ দাস্তি তাই বলেছেন, ইসলাম ও তালেবানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র মালালাকে ব্যবহার করেছে’। একইভাবে বর্তমানে ইরাকের আইএস তাদেরই সৃষ্টি বলে পাশ্চাত্যের অনেক যুদ্ধবিশারদ মন্তব্য করেছেন। অতএব ইসলামের অকৃত্রিম অনুসারীগণ কখনোই তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেবে না, এটাই কাম্য।

সূত্রঃ

মাসিক আত-তাহরীক

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88