মৌলবাদ বনাম নারীবাদ (মৌলবাদীর অভিজ্ঞতা )

এই দুই বাদের মধ্যে দৃশ্যত সম্পর্ক খুবই খারাপ। এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে যারা একই সাথে দুটোকেই পছন্দ করে বা একই সাথে দুটোকেই অপছন্দ করে। এই মূল কারন হচ্ছে এই দুটোর ব্যাপারে মিডিয়ার প্রচার করা সংজ্ঞাগুলো খুবই নির্দিষ্ট এবং সেই সংজ্ঞানুসারে এই দুই বাদীর পক্ষে একে অপরকে পছন্দ করার অবকাশ নাই বললেই চলে।

আমি একজন মৌলবাদী পরিবারের ছেলে। আমার মা ঘরের বাইরে গেলে তার চোখও দেখা যায়না, আমার বাবা আমার মায়ের চেয়েও উচু পর্যায়ের ধার্মিক। তো সেই পরিবারের সন্তান হয়ে আমার অভিজ্ঞতা কি? আমার অভিজ্ঞতা এই যে আমাদের ঘরে সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষটি হচ্ছেন আমার মা। শুধু মা না, এই একই কথা খাটে আমার খালা-চাচীর ব্যাপারেও। কারন আমার মা/খালা/চাচীরা ঘর সামলান এবং ঘরের কোন সিদ্ধান্ত তাদের পরামর্শ/সিদ্ধান্ত ব্যাতীত হয়না। কিন্তু এই পরিস্থিতির পেছনের ঘটনা কি?

আমার মায়ের বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সে। যখন ১৯, তখন আমার জন্ম। বাবার বয়স তখন সবে ২৪। বাবা সকালে যেতেন, চাকরির পর সন্ধ্যায় টিউশনি করে রাত্রে আসতেন। তো সেই ১৯ বছর বয়সে ঘরের সবকিছু করা থেকে ( কোন কাজের মানুষও ছিলনা তখন ) এই আমাকে মানুষ করার পুরো দায়িত্ব ছিল আমার মায়ের। ঘরের যে কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব তখন থেকেই ছিল মায়ের হাতে। শুধু বাবা না, আমার দাদা/দাদী/চাচারাও মায়ের প্রশংসা। এখনো গ্রামের আত্মীয়-স্বজন মাসভর প্রায়ই আমাদের বাসায় থাকেন আর আমার মা আমার বাবাকে/আমাকে জোর করে তাদের জন্য ভালো ভালো বাজার করান। মায়ের মুখে বিরক্তি আসেনা। বাবার চাকরির টাকা থেকে সেই ২০/২২ বছরের মা অল্প অল্প করে জমানো শুরু করেন নিজের জন্য কিছু না কিনে। এখনো আমার মায়ের শরীরে কোন অলংকার নাই। সেই জমানো টাকা দিয়ে কেনা জমিটুকুই আজ আমাদের একমাত্র সম্বল।

তো বাবা কি করতেন? এই যে মা ঘর সামলাতেন, ভবিষ্যত ভাবতেন, আমাকে মানুষ করতেন এই করতে করতে মার তো মেজাজ মাঝে মাঝে গরম হতই। সেই গরম মা বাবার উপর ঝাড়তেন। আর বাবা শুনতেন। বাবা বাহির সামলাতেন আর মা সামলাতেন ঘর। এখন মা তো আর অফিসে থাকেন না, কিন্তু বাবাকে তো ঘরে থাকতে হয়। তাই বাবাকে শুনতেই হবে। এই যে বাবা ধৈর্য্য ধরে শুনতেন তার ফলাফল কি? পরিবারের শান্তির কথা যদি বলি তাহলে এইটুকু বলতে পারি আমার মা-বাবার মধ্যে শেষ কোন মন কষাকষি হয়েছিল কম করে হলেও ২০ বছর আগে। চাপা পিটাইতেছিনা, সত্যি। হ্যা, মাঝে মাঝে কিছু কিছু যে হয়নাই তা না, তবে সেসবের মূল কারন হচ্ছে বাবার কারওয়ান বাজার থেকে ৫ কেজি করল্লা বা সন্ধ্যাবেলায় ১০ কেজি পচা চিংড়ি মাছ কেনা, এইসব আর কি।

তো আমাদের এই না থাকার সংসারেও আমার মা কেন রাগারাগি করেন নাই? কারন তিনি জানতেন, আমার বাবা আমাদের পরিবারে সবার সুখের জন্য নিজের ১০০ ভাগ দেন, মা জানতেন আমার বাবা সবার জন্য কেনার পর কিছু থাকলে নিজের জন্য কিনবেন, এবং মা জানতেন আমার বাবার পক্ষে কোনদিন প্রতারনা করা সম্ভব না কারন আমার বাবা একজন কাট্টা +মৌলবাদী+। এবং আমার বাবাও জানেন, আমার মায়ের পক্ষে কোনদিন এমন কিছু করা সম্ভব না যা ইসলাম সমর্থন করেনা এবং যা ইসলাম সমর্থন করে তা মানতে আমার বাবার কোন আপত্তি নাই।

এই যে আমাদের ঘরে আমার মায়ের পূর্ন ক্ষমতায়ন তার কারন হচ্ছেন আমার মা-বাবা দুইজনেই মৌলবাদী। এই একই কারনে আমার বউও আমার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত। আমি অলস, ক্যারিয়ার ফোকাস না, প্রতি বছর বছর চাকরি চেঞ্জ করি এসব নিয়ে আমার বউ এর অভিযোগের শেষ নাই। কিন্তু আমার বউ আমার চরিত্র/নীতির ব্যাপারে নিশ্চিত এই কারনে যে আমি একজন মৌলবাদী।

এবং আমি জানি আমারে ধৈর্য্য ধরা লাগবে ঠিক যেমন আমার বাবা ধরছেন। আমার বোঝা লাগবে ঘর সামলানো একটা প্রতিষ্ঠান সামলানোর চেয়ে কঠিন। কারন একটা প্রতিষ্ঠানের লিখিত নিয়ম থাকে। ঘরের মানুষের, আত্মীয়-স্বজনের কোন লিখিত নিয়ম নাই, সবাই এক মাপের না। সবার সাথে তাল মিলায়া চলা, সবাইকে খুশি রেখে নিজের ঘরের/বাচ্চাদের দেখভাল করা যে কত কঠিন সেইটা যে লোক সবাইরে খুশি রেখে বছর শেষে কোম্পানীর প্রফিট দেখাইতে পারে তারে জিজ্ঞাস করেন।

তো এইরকম মৌলবাদী+নারীবাদীর ঘরে বড় হবার পরে যখন চ্যাপ্টারবাদীরা বলে “মেয়ে তোমার জরায়ুর স্বাধীনতা তোমার, স্বামীতেও হবে, পরকীয়াতেও হবে” তখন তাদেরকে ঘৃনা করার আমার অধিকার, কারন তারা আগামীতে আমার মত অনেক সন্তানের গর্ব করার রাস্তা বন্ধ করতেছে আমার মায়ের জাতের দোহাই দিয়ে।

আমার মনে হয় আমার মা শুধু তার স্বামী থেকেই যে সম্মান পাইছেন সেই সম্মান এই নারীরা সম্ভবত তাদের বাপ+ভাই+ছেলে+স্বামী মিলায়াও পায়নাই। আমার মনে হয়না, আমি নিশ্চিত। আমি নিশ্চিত তারা আসলে নারীর সম্মান আনয়ন না, তারা আসলে ঐযে সম্পর্কের প্রথম ৫/১০ বছর যখন স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই একটা প্রতিষ্ঠানের মত একটা পরিবারকে দাড় করানোর চেষ্টা করেন সেই সময় সেই চেষ্টার ভাংগন ধরাইতে চায়।

আর তাই আমি এটাও জানি, এইসব চ্যাপ্টারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নারীরে বোঝানো যে মৌলবাদীরা তাদের সম্মান দিবেনা। সম্মান পাইতে হইলে তোমাকে শরীর আর রুপ বেচতে হবে। শরীর আর রুপ না থাকলে তাদের সাথে মিলেমিশে নারীবাদী হইতে হবে।

তাই মৌলবাদী হোন, নারীর অধিকার নিশ্চিত করুন। চ্যাপ্টারের ক্ষেতা পুড়ুন। সাথে সাথে চ্যাপ্টাররে দুধ-কলা দিয়ে পোষা ভারতেরও।

Shahan Reza

Original Source

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member