জীবন ঘনিষ্ট কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-১

জীবন ঘনিষ্ট কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-১

১) ▪ প্রশ্ন: হিন্দুদের হাতের কোনো কিছু খাওয়া যাবে কি?

???? উত্তর: হিন্দুদের জবেহ করার প্রাণী খাওয়া জায়েয নেই। এছাড়া তাদের তৈরি অন্যান্য খাবার খেতে আপত্তি নেই। যেমন, মিষ্টান্ন, চিড়া, মুড়ি, শাক, সবজি, মাছ, ডিম ইত্যাদি। তবে খাদ্যটি যদি মূলতই হারাম হয় (যেমন, মদ, শুকুরের মাংস ইত্যাদি) অথবা যদি তাদের ধর্মীয় উপলক্ষে হয় (যেমন তাদের পূজার প্রাসাদ বা পূজা উপলক্ষে তৈরিকৃত খাবার) তাহলে তা মুসলিমদের জন্য খাওয়া জায়েয নয়।

২) ▪ প্রশ্ন: বিয়ের সময় বাবার বাড়ি থেকে মেয়েদের সাথে যে মালপত্র দেয়া হয় তা কি ঠিক?

???? উত্তর: বিয়ের সময় বাবার পক্ষ থেকে মেয়ে-জামাইয়ের জন্য উপহার দেয়া ভালো। তবে স্বামীর পক্ষ থেকে যদি ‘ডিমান্ড’ হিসেবে দেয়া হয় তাহলে তা দেয়া ও নেয়া উভয়টি হারাম। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে ‘ডিমান্ড’ প্রথা একটি হারাম প্রথা।

৩) ▪প্রশ্ন: “হাসবি রাব্বি জাল্লালাহ” ও “মাফি কালবী গায়রুল্লাহ” কথাগুলোর অর্থ কি? এগুলো কি বলা যাবে?

???? উত্তর: “হাসবি রাব্বি জাল্লালাহ” এর অর্থ: “সুমহান প্রতিপালক আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট।” উক্ত বাক্যটি অর্থের দিক দিয়ে ঠিক আছে।

“মাফি কালবি গায়রুল্লাহ” অর্থ: “আমার অন্তরে আল্লাহ ছাড়া আর কিছু নাই।” এটি আত্মপ্রশংসায় বাড়াবাড়ি। এভাবে নিজের গুণগান গাওয়া কিভাবে বৈধ হতে পারে? তাছাড়া এ সব কথা বলে যিকির করা সূফীদের কাজ। আর বর্তমান যুগে তথাকথিত ইসলামী গানের শিল্পীরা এসব কথা বলে গান গায়। এটি সূফীবাদের নতুন ভার্সন ছাড়া অন্য কিছু নয়।

৪) ▪প্রশ্ন: দুজন ব্যক্তির মধ্যে যদি মনমালিন্য থাকে আর এর মধ্যে একজন ব্যাক্তি যদি অপর ব্যক্তির সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয় কিংবা ঝগড়া বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে লোকটির কি পাপ হবে? সে লোকটি ঝগড়া করে নি বরং অপর লোকটি তাকে কষ্ট দিয়েছে।

???? উত্তর: আপনার পক্ষ থেকে যদি সে ব্যক্তির সাথে সুসম্পর্কের জন্য প্রচেষ্টা থাকে আর সে এড়িয়ে চলে তাহলে তাতে আপনার গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ। বরং মুসলিম ভাইকে কষ্ট দেয়া এবং সম্পর্ক নষ্ট করার কারণে সে গুনাহগার হবে। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমীন।

৫) ▪প্রশ্ন: আমি বাণিজ্য বিভাগের একজন ছাত্রী। প্রশ্ন হল, এ বিভাগে কি লেখাপড়া করা বৈধ হবে? কেননা এতে সুদ সম্পর্কিত অনেক বিষয় আছে। আমি চাকরি করতে চাই না। তবে জানতে চাই, এ বিভাগে লেখাপড়া ঠিক কি না?

???? উত্তর: হ্যাঁ, জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে পড়াশোনা করা যাবে। কিন্তু কর্মজীবনে সুদ লেনদেন করা যাবে না, সুদি ব্যাংকে চাকুরী করা যাবে না বা সুদ সংশ্লিষ্ট কোন কিছুর সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না।

আল্লাহ আমাদের শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে হেদায়েত দান করুন যারা মুসলিম দেশে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে হারাম বিষয় শিখতে বাধ্য করে। আমীন।

৬) ▪ প্রশ্ন: অনেকে মহান আল্লাহর আকৃতিতে বিশ্বাস করে না। তিনি কি রকম তা আমরা জানিনা। তিনি নিজের সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। কিন্তু যারা তা বিশ্বাস করে না তাদের এ বিশ্বাস টা কি ঠিক?

???? উত্তর: আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক বিশ্বাস হল, কুরআন ও হাদীসে আল্লাহ তাআলার যেসব গুণাবলী ও বৈশিষ্ট বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর প্রতি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবেই হুবহু বিশ্বাস রাখা। যেমন, আল্লাহর চেহারা, হাত, চোখ ইত্যাদি।

কিন্তু সেগুলোর আকার, আকৃতি, ধরণ, সাদৃশ্য, উদাহরণ বা উপমা দেয়া যাবে না। আবার তা অস্বীকার বা অপব্যাখ্যা করা যাবে না। এটিই হল আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর আকীদা।।

কেউ যদি এই বিশ্বাস থেকে সরে গিয়ে অন্য কিছু বিশ্বাস করে তাহলে তা হবে কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী স্পষ্ট গোমরাহী মূলক বিশ্বাস যা কুফুরী পর্যন্ত পৌছে যেতে পারে। এ বিষয় কেন্দ্র করে অনেক ফিরকা গোমরাহীতে ডুবে আছে। যেমন, জাহমিয়া, মুতাযিলা, আশআরী, মাতুরিদীয়া, মুশাব্বিহা, মুজাসসিমা ইত্যাদি।

আর সালাফগণ তাদের প্রতিবাদে অনেক মূল্যবাদ গ্রন্থ রচনা করেছেন।

৭) ▪প্রশ্ন: একজন নারীর জন্য আপন চাচা এবং বাবার চাচাতো ভাই কি মাহরাম?

???? উত্তর: মুসলিম নারীর জন্য তার আপন চাচা মাহরাম। (মাহরাম হওয়ার দিকে দিয়ে চাচা পিতার অনুরূপ) তবে বাবার চাচতো ভাই মাহরাম নয়। সুতরাং তার সামনে পর্দা করা আবশ্যক।

৮) ▪ প্রশ্ন: “ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমান, ইয়া সুব্বুহু, ইয়া কুদ্দুসু, ইয়া গাফুরু, ইয়া ওয়াদুদ” এভাবে বলা কি সহীহ? এভাবে কি যিকির করা বৈধ?

???? উত্তর: আল্লাহ, রাহমান, সুব্বূহ, কুদ্দূস, গাফূর ইত্যাদি নামগুলো মহান আল্লাহর অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ গুণবাচক নাম। তবে কেবল ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমান, ইয়া সুব্বূহ, ইয়া কুদ্দূস, ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমান, ইয়া যালজালি ওয়াল ইকারাম…এভাবে যিকির করা ঠিক নয়। অনেক আলেম এটিকে বিদআত বলেছেন। কেননা, হাদীসে এভাবে যিকির করার কথা বর্ণিত হয় নি। আর এ ধরণের যিকিরগুলো পূর্ণ অর্থবোধক বাক্য নয়। এতে উপকারী কোন অর্থও প্রকাশ পায় না। কেননা এই নামগুলো উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলাকে ডেকে যদি কোন আবেদন বা প্রার্থনা পেশ না করা হয়, তবে এই ডাকটাই অনর্থক হয়ে যায়।

তাই যদি এভাবে বলা হয় তাহলে যথার্থ হবে। যেমন,

– ইয়া গাফূর, ইগফির লী (হে ক্ষমাশীল আমাকে ক্ষমা করে দাও)।

– ইয়া রাহমান, ইরহামনী (হে দয়াময়, আমার প্রতি দয়া করো)।

– ইয়া রাযযাক, উরযুকনী (হে খাদ্যদাতা, আমাকে খাদ্য দান করো।) এভাবে আল্লাহ তাআলার নাম ধরে ডাকার পর নিজের চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরতে হবে। এটাই হল সঠিক পদ্ধতি। কেননা তখন তা হবে অর্থবোধক বাক্য যার মাধ্যমে আল্লাহকে ডাকার উদ্দেশ্য প্রকাশ পাবে। আল্লাহু আলাম।

এ ছাড়াও হাদীসে সুবহান আল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ ইত্যাদি অসংখ্য যিকির বর্ণিত হয়েছে। আমাদের উচিৎ উক্ত মাসনূন যিকিরগুলো যত্নের সাথে পাঠ করা।

উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আল হাদীস এন্ড ইসলামী স্টাডিজ)

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

https://www.facebook.com/AbdullaahilHadi

Original Source

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member