এবং হিমু যখন প্র্যাকটিসিং মুসলমান (পর্ব-১১)

রেশমা খালার প্যালেসে এক সপ্তাহ পার করে দিলাম। সমস্যামুক্ত জীবন যাপন। আহার,বাসস্থান, নামাজ নামক কয়েকটি মৌলিক দাবি মিটে গেছে। এই তিনটি দাবি মিটলেই বিনোদনের দাবি উঠে। খালার বাসায় বিনোদনের ব্যবস্থা প্রচুর আছে। বিশেষ করে নামাজের ঘরটা সত্যিই আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। খালা বেড় হলেই ঐ ঘরে আমরা বসে নানা গল্প করি। মালি দুই বার্বুর্চির সাথে এখন আমার বেশ সখ্য। আমার ভালোই লাগছে। প্রথম দিন থেকে জান্নাত নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম। পড়তাম আর খালা না থাকলে সবাইকে নিয়ে বসে জান্নাত এর বিচার বিশ্লেষণ করতাম। এখন চলছে জাহান্নাম পর্ব। ভয়াবহ ব্যপার , জান্নাতের আলোচনায় সবার মুখ যেমন উজ্জ্বল থাকতো জাহান্নামের আলোচনায় ততটাই থাকে গম্ভীর। আমি এখানে ভালোই আছি।।

ট্রাক দেখলে লোকে রাস্তা ছেড়ে পালিয়ে যায়, কিন্তু সেই খোলা ট্রাকে করে ভ্রমণের আনন্দ অন্যরকম। আমার অবস্থা হয়েছে এরকমই। রেশমা খালার সঙ্গে গল্প গুজব করতে এখন ভালোই লাগে। শুধু রাতে একটু সমস্যা হয়। রেশমা খালা আমার দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বলেন, আয় আয় , দেখে যা, নিজের চোখে দেখে যা । বসে আছে , খাঁটে পা দুলিয়ে বসে আছে।

আমি হাই তুলতে তুলতে বলি, থাকুক বসে। তুমিও তার পাশে বসে পা নাচাতে থাকো। এ ছাড়া আর করার কি আছে?

পুরো পুরি নিশ্চিন্ত, নির্ঝঞ্জাট জীবন যাপন সম্ভব না। সব জীবনেই কিছু ঝামেলা থাকবে। কাবাব যত ভালই হোক , কাবাবের এক কোনায় ছোট হাড্ডির টুকরো থাকবেই।

রাতে রেশমা খালার হই -চৈ, ছোটা ছোটি , চিৎকার অগ্রাহ্য করতে পারলে গনি প্যালেসে মাসের পর মাস থাকা যায়। তাছাড়া ঐ বাড়ির বাবুর্চি দ্বয়ের সাথে সখ্য হওয়ায়, সময়ও বেশ ভালো যাচ্ছে। ভালো মন্দ খাবার না চাইতেও আমার ঘরে চলে আসছে। এক সকালে ইংলিশ বাবুর্চি আমার জন্যে বিরাট এক বাটি স্যুপ বানিয়ে এনে বলল, আপনি একবার ঝিনুকের স্যুপ খেতে চেয়েছিলেন , বানাতে পারিনি। আজ বানিয়েছি । খেয়ে দেখুন স্যার, আপনার পছন্দ হবে। সঙ্গে মাশরুম আর ব্রকোলি দিয়েছি।

বাটির ঢাকনা খুলে আমার নাড়ি ভুরি পাক দিয়ে উঠলো। সাদা রঙের স্যুপ ভেতরে থক থকে ঝিনুকের ভেতরের নরম মাংসল দেহ দেখা যাচ্ছে। একটা জিনুকের খোশা আবার উল্টো হয়ে আছে।

বাবুর্চি শান্ত স্বরে বলল, সস টস কিছু লাগবে স্যার?

আমি বললাম , কিছুই লাগবে না।

যদিও ঝিনুকের স্যুপ খাঁওয়ার একটা ইচ্ছা ছিল কিন্তু এখন দেখে কেমন জেনো লাগছে। বেচারা এত কষ্ট করে বানিয়েছে। আর জিনিসটাও হালাল(বেশির ভাগ মাজহাবের মতে) , অসুবিধা কি।

আমি বিসমিল্লাহ বলে এক চামচ স্যুপ মুখে দিলাম।

শান্ত গলায় বললাম স্যুপটা মন্দ হয় নি। ঝিনুকের পরিমাণ আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো।

আমি তাকে সামনে দাঁড় করিয়েই পুরো বাটি স্যুপ খেয়ে বললাম– বেশ ভাল হয়েছে। পরের বার ঝিনুকের পরিমাণ বাড়াতে হবে। মনে থাকবে তো।

বাবুর্চি খুশি খুশি বলল, জ্বি আচ্ছা স্যার।

রেশমা খালা আমার প্রতি যথেষ্ট মমতা প্রদর্শন করছেন। সেই মমতার নিদর্শন হচ্ছে আমাকে বলেছেন ও হিমু, তোর তো আবার রাত বিরাতে হাটা হাটির স্বভাব আছে। গভীর রাতে নাকি মাসজিদে মাসজিদে গিয়ে পড়ে থাকিস।না হলে নাকি তোর পেটের ভাত হজম হয় না। এখন থেকে গাড়ি নিয়ে হাটাহাঁটি করবি। মাসজিদে যাবি ।

আমি বললাম , গাড়ি নিয়ে হাটা হাঁটি কিভাবে করবো খালা?

পাজেরো নিয়ে বের হবি , যেখানে যেখানে হাঁটতে ইচ্ছে করবে ড্রাইভারকে বলবি– গাড়ি নিয়ে যাবে।

এটা মন্দ হয় না। গাড়িতে চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল।

কিছুদিন থেকে আমি পাজেরোনিয়ে হাঁটছি। অশ্চর্য হয়ে লক্ষ করছি , এই গাড়িতে বসলেই ছোট ছোট গাড়ি বা রিকশাকে চাপা দেয়ার প্রবল ইচ্ছা হয়। ট্রাক ড্রাইভার কেন অকারণে টেম্পো বা বেবিট্যাক্সির উপর ট্রাক তুলে দেয় আগে কখনও বুঝিনি। এখন বুঝতে পারছি। নিজের সাথে যে কারিন (শয়তানের নাম , প্রত্যেক মানুষের সাথে একজন করে শয়তান এসাইন করা আছে , এদেরকে কারিন বলে) থাকে তার প্ররোচনা থাকে ব্যপক। এখন মনে হচ্ছে দোষটা ট্রাক ড্রাইভারের হলেও আসল মজাটা নিয়ে নেয় কারিন। যখনই কেউ বড় হয় — কারিন তাকে প্ররোচিত করে তার থেকে ছোট কে পিষে ফেলতে। শয়তান এমনই প্রভাব বিস্তার করে মানুষের ওপর যে বানরকে যিনি নিজের আদি পিতা মনে করেন সেই ডারউইন সাহেবও সারভাইভাল ফর দ্যা ফিটেস্ট তত্ব দীয়ে বসে আছেন।

পাজেরো নিয়ে হাটতে বের হবার একটাই সমস্যা — গলি পথে হাটা যায় না। রাজপথে হাঁটতে হয়। এরকম রাজ পথে হাটতে বের হয়েই একদিন ইরামের সঙ্গে দেখা। সে বেশ হাত নেরে গল্প করতে করতে এক বেপর্দা মেয়ের সঙ্গে যাচ্ছে । দুর থেকে দুজনকে খুব ঘনিষ্টজন বলেই মনে হচ্ছে। আমি পাজেরোর ড্রাইভারকে বললাম এখান থেকে জোড়ে হর্ন দেন যাতে ঐ যে দুই জন হাঁটছে ওরা ফিরে তাকায়।

ড্রাইভার বিরক্ত গলায় বলল

এতো দুর দিয়া হর্ন দিলে এরা শুনবো না। আসে পাশের গাড়ি গুলা বিরক্ত হইব।

তাহলে একটা কাজ করেন এইখানে ব্রেক করেন। আপনি নেমে গিয়ে ঐ যে ছেলেটা মেয়েটার সাথে হাঁটছে ঐ ছেলেটাকে গিয়ে বলুন– বস ডাকছে। যদি আপনার কথা শুনে সে আসতে না চায় তাহলে গালে জোড়ে একটা থাবড়া বসিয়ে দেবেন । তারপর কলার ধরে নিয়ে আসবেন।

জ্বি আচ্ছা ।

ড্রাইভার গাড়ি ব্রেক করে নেমেছে। চড় থাপ্পড় দেয়ার কথা বললে ড্রাইভারদের কাজের স্পৃহা বেড়ে যায়।

ড্রাইভার সাহেব ।

জ্বি স্যার।

বস ডেকেছে বলার দরকার নাই। বলবেন হিমু ভাই ডাকে। আর বাকি সব ঠিক আছে। না আসলে যা বলেছি তাই করবেন কি পারবেন না ।

পারব না মানে কি বলেন স্যার। ঢাকার রাস্তায় বিশ বছর ধরে গাড়ি চালাই দুই একটারে রাস্তায় থাবড়া দেয়া বড় কোন ঘটনা না।

ঠিক আছে যান।

ইরামের গালে থাবড়া বসাতে হল না । সে মেয়েটাকে দাড়া করিয়ে রেখে গাড়ির দিকে এগিয়ে এলো।

মেয়েটা কে ইরাম? তোমার বোন ?

ইরাম শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে, আমার কাছ থেকে রসিকতা মেনে নিতে পারছে না।

বোন হতে যাবে কেন?

এমন ভাবে কথা বলছিলে দেখে মনে হল খুব কাছের কেউ ।

আপনি হুজুর মানুষ এই অনুভূতি গুলো আপনারা বুঝবেন না।

আমি কিঞ্চিত হাসলাম

প্রেমানুভুতি হুজুরদের প্রবল হয়।তারা বেশি রোমান্টিক হয়। কিন্তু তোমাদের এই ধরনের অনুভূতি গুলো না বোঝাই ভাল। বুঝে রবের বিরুদ্ধে যাওয়ার থেকে না বুঝে রবের হুকুম মেনে নেয়াও ভাল।

আপনারা তাহলে না বুঝেই রবের কথা মেনে নেন।

হ্যাঁ।অনেক ক্ষেত্রে তা বলতে পার । কারণ বিভিন্ন জল্পনা কল্পনার গবেষণার পর, যখন প্রমাণ পেয়েছি এবং সেই বিশ্বাস করেছি – সৃষ্টি কর্তা আছেন এবং ইসলাম সত্য ধর্ম — এই দুটি বিষয় যখন লজিক দিয়ে , বিজ্ঞান দিয়ে , অনুভূতি দিয়ে মেনে নিয়েছি। তখন থেকে আল্লাহর হুকুম এবং আহকামকেও বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়া শুরু করেছি। রবকেই যখন মেনে নিয়েছি রবের হুকুম মানব না কেন? কিছু হুকুমের পেছনে কি লজিক রয়েছে সেটা আমরা জানি, কিছু হুকুমের পেছনের লজিক জানি না। এতে কিছুই যায় আসে না। আমাদের রব আমাদের জন্যে খারাপ চিন্তা করেন না।

আপনার সাথে তর্ক করব না । বাদলদের বাড়িতে আপনাকে যেতে বলেছিলাম , আপনি যান নি । ঐ বাড়িতে আপনাকে ভয়ংকর দরকার।

দরকার হলেও কিছুই করার নাই। আচ্ছা ইরাম আমি বিদায় হচ্ছি।

ইরাম কয়েক মুহুর্ত চুপ করে থেকে বলল , আপনি এখন চলে গেলে আর আপনার দেখা পাব না। বাদলের আপনাকে ভয়ংকর দরকার।

তাহলে দেরি করে লাভ নেই, উঠে এসো। চলো একসাথে যাই ।

এই গাড়িটা কার?

গাড়িটা কার এটা গুরুত্ব পূর্ন না । গাড়িতে কে বসে আছে সেটা গুরুত্ব পূর্ন । তুমি দেরি করছ ইরাম।

আপনি আসলে চেষ্টা করছেন সোনিয়া থেকে আমাকে সরিয়ে নিয়ে যেতে কেন বলুন তো।

তোমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি ইরাম ।

আমি বেঁচেই আছি।

সোনিয়া বোধহয় কিঞ্চিত বিরক্ত — দুর থেকে গলা উঁচিয়ে ইরামকে ডাকছে।

আমি বললাম , যাও ইরাম, তোমাকে ডাকছে

ইরাম দোটানায় পরে গেল । আমি ড্রাইভারকে বললাম চলেন যাওয়া যাক ।

ড্রাইভার হুস করে বের হয়ে গেলো। যতটা স্পীডে তার বের হওয়া উচিত তারচেয়েও বেশি স্পীডে বের হল। মনে হচ্ছে সেও খানিকটা অপমানিত হয়েছে। যাকে থাবড়া মারার কথা সেই লোক পাজেরোর মত গাড়িটাকে অগ্রাহ্য করল।

এখন কোন দিকে যামু স্যার ?

এখন একটা মাসজিদের সামনে রাখবেন । আজকে রবের কাছে বিশেষ কিছু চাওয়ার আছে।

 

দুপুরের দিকে আমি আমার পুরানো মেসে গেলাম। বদরুল সাহেবের খোজ নেয়া দরকার। চাকরির কিছু হয়েছে কিনা । হবার কোন সম্ভাবনা আমি দেখছি না , তবে বদরুল সাহেবের আল্লাহর ওপর বিশ্বাস থেকে মনে হচ্ছে হয়ে যেতেও পারে। মানুষের সব থেকে বড় শক্তি হচ্ছে তার বিশ্বাস , তার ইমান।

অনেকক্ষণ কড়া নাড়ার পর বদরুল সাহেব দরজা খুললেন। তার হাসি খুশি ভাব আর নেই। চোখ বসে গেছে। এই কদিনেই মনে হয় শরীর ভেঙ্গে পড়েছে। তার গোল গাল মুখ কেমন লম্বাটে দেখাচ্ছে।

বদরুল সাহেবের খবর কি?

খবর ভালো না হিমু ভাই।

কেন বলুন তো ?

আমার স্ত্রীর শরীরটা খুব খারাপ। ছোট মেয়ের চিঠি গত পরশু পেয়েছি। চিঠি পাওয়ার পর থেকে খেতেও পারছি না ঘুমুতেও পারছি না।

ঢাকায় পড়ে আছেন কেন? আপনার চলে যাওয়া উচিত না?

ইয়াকুব আগামিকাল বিকেলে দেখা করতে বলেছেন , এই জন্যেই যেতে পারছি না।

শেষ পর্যন্ত তাহলে আপনাকে চাকরি দিচ্ছে?

জ্বি । চাকরিটাও তো খুব বেশি দরকার। চাকরি না পেলে সবাই না খেয়ে মরব।

আমি খুবই গরিব মানুষ হিমু ভাই। কত শখ ছিল স্ত্রী -পুত্র -কন্যা নিয়ে একসঙ্গে থাকব। অর্থের অভাবে সম্ভব হয় নাই। একবার মালিবাগে একটা বাসা প্রায় ভাড়া করে ফেলেছিলাম। দুই রুমের একটা ফ্ল্যাট । বারান্দা আছে। রানার একটা জায়গা আছে। সামনে বড় আমগাছের ডালে দোলনা বাঁধা। এত পছন্দ হয়েছিল। ভেবেছিলাম কষ্ট করে কোন মতে থাকব। এরা ছয় মাসের ভাড়া এডভানস চাইল । কোথায় পাব ছয় মাসের এডভান্স , বলুন দেখি।

তা তো বটেই।

হিমু ভাই, ছোট মেয়ের চিঠিটা একটু পড়ে দেখেন। মাত্র ক্লাস ফোঁড়ে পড়ে।, কিন্তু ভাই চিঠি পড়লে মনে হয় না। মনে হয় কলেজে পড়া মেয়ের চিঠি। দুটা বানান অবশ্য ভুল করেছে।

চিঠি পড়লাম

আমার অতিপ্রিয় বাবা ,

বাবা, — মার খুব অসুখ করেছে। প্রথমে বাসায় ছিল , তারপর পাশের বাড়ির মজনু ভাইয়া মা কে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। ডাক্তাররা বলছে ঢাকা নিয়ে যেতে। বাসায় সবাই কান্নাকাটি করছে।

তুমি কোন টাকা পাঠাও নি কেন বাবা? মা প্রথম ভেবেছিল পোস্টাপিসে টাকা আসেনি। রোজ পোস্টাপিসে খোজ নিতে যায়। তারপর মা কোত্থেকে যেন শুনল তুমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছ।

বাবা, সত্যি কি তুমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছ? সবাই চাকরি করে , তুমি চাকরি ছেড়ে দিলে কেনো বাবা? তুমি চাকরি করছ না শুনে মা তেমন কান্না কাটি করেনি কিন্তু বড় আপা এমন কান্না কেঁদেছে তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না। বড় আপা কাঁদে আর বলে , ‘আমার এত ভালো বাবা। আমার এত ভালো বাবা।’ আমি বেশি কাঁদিনি, কারণ আমি জানি তুমি খুব একটা ভাল চাকরি পাবে। কারণ আমি নামাজ পড়ে দোয়া করেছি। বাবা, আমি নামাজ পড়া শিখছি। ছোট আপা বলেছে আত্তাহিয়াতু ছাড়া নামাজ হয় না। ঐ দোয়াটা এখনো মূখস্থ হয় নি । এখন মূখস্ত করছি মুখস্ত হলে আবার তোমার চাকরির জন্যে দোয়া করব।

বাবা,– মার শরীর খুব খারাপ। এত খারাপ যে তুমি যদি মা কে দেখ চিন্তে পারবে না । তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো বাবা।

ইতি তোমার অতি আদরের মেয়ে

জাহেদা বেগম

ক্লাস ফোর

রোল নং ১

চিঠি পড়েছেন হিমু ভাই?

জ্বি।

মেয়েটা পাগলি আছে। চিঠির শেষে সব সময় কোন ক্লাস রোল নং কত লিখে দেয়। ফার্স্ট হয় তো , এই জন্য বধ হয় লিখতে ভাল লাগে।

ভাল লাগারই কোথা।

দুটা বানান ভুল করেছে লক্ষ্য করেছেন?খোঁজ আর মুখস্থ। মুখস্থ দীর্ঘ উকার দিয়ে লিখেছে। কাছে থাকি না, কাছে থাকলে যত্ন করে পড়াতাম । সন্ধ্যাবেলা নিজের ছেলেমেয়েদের পড়াতে বসার আনন্দের কি কোন তুলনা আছে? তুলনা নেই। সবই কপাল।

বদরুল সাহেবর চোখে পানি এসে গেছে। তিনি চোখের পানি মুছছেন। যতই মোছেন ততই তার চোখে পানি আসছে।

বদরুল সাহেব।

জ্বি হিমু ভাই।

আগামীকাল পাঁচটার সময় আপনার ইয়াকুব সাহেবের কাছে যাবার কথা না?

জ্বি ।

আমি ঠিক চারটা চল্লিশ মিনিটে এসে আপনাকে নিয়ে যাব। আমিও যাব আপনার সঙ্গে । আপনার বন্ধু আবার আমাকে দেখে রাগ করবে না তো?

জ্বি না, রাগ করবে না। রাগ করার কি আছে । সে যেমন আমার বন্ধু , আপনিও সে রকম আমার বন্ধু। আপনি সঙ্গে থাকলে ভাল লাগবে। চাকরির সংবাদ একসঙ্গে পাব। দুঃখ ভাগাভাগি করতে ভাল লাগে না ভাই সাহেব, কিন্তু আনন্দ ভাগাভাগি করতে ভাল লাগে।

ঠিক বলেছেন। দুপুরে কিছু খেয়েছেন?

দুপুরে কিছু খাব না ।

কেন?

হিমু ভাই আজকে সব খারাপ এর মধ্যেও একটা ভালো ঘটনা ঘটেছে আলহামদুলিল্লাহ।

কি ঘটল ।

ফার্মগেট গিয়েছি হঠাত দেখি রশিদ । আব্দুর রশিদ।

কি চশমার ডাঁট শুতো দীয়ে বেঁধে সাহায্য চাইছে?

না ভাই।চশমার ডাঁট তো দেখলাম ঠিক আছে। মাথায় টুপিও পরেছে। রাস্তায় বসে বসে এখন মানুষের ডায়াবেটিস টেস্ট করে দিচ্ছে। প্রতি টেস্ট পঞ্চাশ টাকা। প্রচুর মানুষ টেস্ট করাচ্ছে । খুব ভালো ব্যবসা হচ্ছে মনে হল। আমি সামনে যেতেই প্রশস্ত হাসি দীয়ে পাশে বসাল। আমার ডায়বেটিস ফ্রিতে মেপে দেয়ার জন্য চাপাচাপি করল।

আপনি টেস্ট করেন নি?

না হিমু ভাই । শুধু শুধু বন্ধুর ব্যবসার ক্ষতি করে লাভ কি। আমি তো ভালোই আছি।

তা ঠিক ।

আব্দুর রশিদ মানুষ খারাপ না হিমু ভাই। আমি যখন উঠে আসছি ,হঠাত আমার হাতটা ধরে আমার হাতে একশ টাকা গুঁজে দিল। আমি তো লজ্জায় আধমরা , সে আমার অবস্থা বুঝে বলল, ধার দিলাম পরে শোধিয়ে দিস।

হিমু ভাই আব্দুর রশিদকে এই অবস্থায় দেখে আমার যে কি আনন্দ লাগছিলো তখন । আনন্দে চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে। আমার এই সমস্যা । একটু হলেই চোখ ভিজে যায়।

বদরুল সাহেবের চোখ এখনও ভিজে গেছে সে শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছছে।

আমি বললাম

আপনি তাহলে দুপুরে কিছু খাবেন না?

জ্বি না । দুটা সিঙ্গারা খেয়েছিলাম পেটে গ্যাস হয়ে আছে। একটা কথা হিমু ভাই

বলুন।

আব্দুর রশিদ আপনাকে সালাম জানিয়েছে, খাস করে তার জন্য দুয়া করতে বলেছে । আমি বুঝলাম না সে আপনাকে চিনল কি করে?

আমি ম্যানতা মার্কা বিখ্যাত হাসিটা দিলাম , এই হাঁসি এমন একটি অস্ত্র যা মানুষের দিকে তাক করলে মানুষ আর প্রশ্ন করতে পারে না । তারপর বললাম

বদরুল সাহেব আমি উঠি। আগামীকাল চাকরির খবর টা নিয়ে আমরা এক কাজ করব। সরাসরি আপনার দেশের বাড়িতে চলে যাব।

সত্যি যাবেন হিমু ভাই?

যাব ইন শা আল্লাহ ।

আপনার ভাবীর শরীরটা খারাপ , আপনাকে যে চারটা ভাল মন্দ রেধে খাওয়াব সে উপায় নেই।

শরীর ঠিক করিয়ে ভাল মন্দ রাঁধিয়ে খেয়ে তারপর আসব ইন শ আল্লাহ। ভাবী সবচে ভাল রাঁধে কোন জিনিসটা বলুন তো?

গরুড় গোশত একটা রান্না সে জানে। অপুর্ব। মেথিবাটা দীয়ে রাঁধে । পুরো একদিন সিরকা আদা রসুনের রসে গশত ডুবিয়ে রাখে, তারপর খুব অল্প আঁচে সারাদিন ধরে জ্বাল হয়।। বাইরে থেকে এক ফোটা পানি দেয়া হয় না… কি যে অপূর্ব জিনিস ভাই সাহেব।

ঐ মেথির রান্নাটা ভাবীকে দিয়ে রাধাতে হবে ইন শা আল্লাহ ।

অবশ্যই অবশ্যই । পোনা মাছ যদি পাওয়া যায় তাহলে আপনাকে এমন এক জিনিস খাওয়াবো, এই জীবনে ভুলবেন না। কচি সজনে পাতা বেঁটে পোনা মাছের সঙ্গে রাঁধতে হবে। কোন মসলা না, কিছু না , দুটা কাঁচামরিচ, এক কোয়া রসুন, একটু পেয়াজ। এই দেখুন বলতে বলতে জিবে পানি এসে গেলো ।

জিবে পানি যখন এসে গেছে চলুন খেয়ে আসি।

জ্বি আচ্ছা চলুন। আপনি দেশে যাবেন ভাবতেই এত ভাল লাগছে।

মেস থেকে ব্যাড় হবার মুখে ম্যানেজার হায়দার আলী খাঁ বললেন স্যার আপনি মেসে ছিলেন না , আপনার কাছে ঐ ছেলেটা দুবার এসেছিল।

ইরাম ?

জ্বি ইরাম। উনার বাসায় যেতে বলেছে। খুব নাকি দরকার।

জানি । আমার সাথে ঐ ছেলের দেখা হয়েছে।খাঁ সাহেব — আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন কেন শান্ত হন ।

জ্বি স্যার।

হায়দার আলী খাঁ পিরিচে চা খাচ্ছিলেন; আবার সারা শরীরে চা ফেলে দিল। এই মানুষটা আমাকে এত ভয় পায় কেন কে জানে।

(চলবে ইন শা আল্লাহ … )

আগের পর্বগুলোর লিংক

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member