ইসলাম ‘আমার স্বপ্নপূরণের একমাত্র পাথেয়’

বিষয়: কেন আমি ইসলামকে ভালোবাসি (পর্ব-৫)
লিখেছেন: আরিফুল ইসলাম দিপু (NSTU)

শিরোণাম: ‘আমার স্বপ্নপূরণের একমাত্র পাথেয়’

.
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ সুবহানওয়া তা’আলার, যিনি আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যিনি আমার অন্তরে আশা জাগিয়েছেন । আর শান্তি অবতীর্ণ হোক সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর অনুসারীদের উপর।
.
সাধারণত প্রতিটা মানুষই তার নিকট ভবিষ্যত নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে । আর এই স্বপ্ন বিভিন্নজনের নিকট বিভিন্ন রকম হয় । যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা থাকে অপূরণীয় ও অবাস্তব । কিন্তু কেউ যদি জানতে পারে তার দেখা সবচেয়ে আনন্দময় স্বপ্নটি কিছুক্ষণ পর বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে, তাহলে তাঁর পক্ষে খুশি না হয়ে উপায় নেই । বরং সে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল একজন ব্যক্তি বলে দাবি করতেও কুণ্ঠিত হবে না।

আর আমার সেই আনন্দময় স্বপ্নটি হলো একটি স্থায়ী উপভোগ্য জীবন, যেখান থাকবেনা কোন দুঃখ-কষ্ট, যেখানে থাকবেনা মৃত্যুর মতো আকস্মিক থামিয়ে দেয়ার ঘটনা, যেখানে থাকবেনা পরস্পর শত্রুতা । আর এই স্বপ্নপূরণ হওয়াই আমার শ্রেষ্ঠ পাওয়া । কিন্তু কে দিবে আমাকে এই স্বপ্নপূরণের নিশ্চয়তা, কে দেখাবে এই স্বপ্নপূরণের সঠিক রাস্তা?
.
হ্যাঁ । এই স্বপ্নপূরণ হওয়ার রাস্তা আমি পেয়ে গেছি । তবে তা পৃথিবীর কোন ক্ষমতাশীল মানুষের কাছ থেকে নয়, কিংবা অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে ক্রয় করে নয় । বরং আমার মহিমান্বিত প্রভু, আল্লাহ্ সুবহানওয়া তা’আলার নির্ধারিত জীবন বিধান ইসলাম’ই আমার একমাত্র পাথেয় । যেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে আমার স্বপ্নপূরণের অঙ্গীকারসমূহ।
.
যেমনটি আমার প্রভুর পক্ষ হতে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেনঃ
“মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ন শ্রবন করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার; (যার অর্থ)- “কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে। (সূরা সাজদাহ- ১৭)” – [সহীহুল বুখারী- ৩২৪৪, ৪৭৭৯,৪৭৮০]
.
আমার প্রভু আবারো নিশ্চিত করে বলেছেন:

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস” -(সূরা কাহফ, আয়াত: ১০৭)
.
*জান্নাতুল ফিরদাউস: এমন বাগান (জান্নাত) যাতে রয়েছে সব ধরনের গাছ গাছালি এবং বিভিন্ন বাগানে (জান্নাতে) যা থাকে তা সবই এক জায়গায় অর্থাৎ ঐ বাগানে পাওয়া যায়। (দেখুন: আল্লামা ইবনে হাজরের ফতহুল বারী ১৩/৬, কামুসুল মুহিত পৃ: ৭২৫)
.
তিনি আরও বলেন:
“সেখানে থাকবে সচ্চরিত্রা সুন্দরী রমণীগণ। তাঁবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ। কোন জিন ও মানব পূর্বে তাদেরকে স্পর্শ করেনি।” -( সূরা আর রহমান: ৭০, ৭২, ৭৪)
.
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন:
“যদি জান্নাতের একজন রমণী পৃথিবীতে ক্ষণিকের জন্য দৃষ্টি দেয়, তাহলে সে পৃথিবীর পুরো আবহাওয়া সুগন্ধির ঘ্রাণে ভরে দিবে । তার মাথার মুকুট দুনিয়া ও এর মাঝে যা কিছু আছে তার চেয়ে মূল্যবান ।” – [তাবারানী]
.
আল্লাহ্ সুবহানওয়া তা’আলা আরো বলেন:

وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقًا ۙ قَالُوا هَٰذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِن قَبْلُ ۖ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا ۖ وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ ۖ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

“আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। যখনই তাদেরকে জান্নাত থেকে কোন ফল খেতে দেয়া হবে, তারা বলবে, ‘এটা তো পূর্বে আমাদেরকে খেতে দেয়া হয়েছিল’। আর তাদেরকে তা দেয়া হবে সাদৃশ্যপূর্ণ করে এবং তাদের জন্য তাতে থাকবে পূতঃপবিত্র স্ত্রীগণ এবং তারা সেখানে হবে স্থায়ী” -(সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৫)
.
অর্থাৎ আমার স্বপ্নপূরণের যাবতীয় বিষয়াধি কেবল আমার প্রভুর পক্ষ হতেই পাওয়ার সুযোগ রয়েছে । আর তা আমাকে নিশ্চিত করেছে সত্য ধর্ম ইসলাম। শুধু কি তাই ? ইসলাম আরও দেখিয়ে দিয়েছে এই স্বপ্নপূরণের সহজ ও সরল রাস্তা।
.
আমার প্রভু (সুবহানওয়া তা’আলা) বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ

تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

“মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ।” – (সূরা আছ ছফ, আয়াত: ১০-১১)
.
আর তা কিভাবে হবে এই শিক্ষা নিতে হবে নবী মুহাম্মদ (সা:) এর নিকট হতে । কারণ তাঁর মধ্যেই রয়েছে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ । যা আমার প্রভু নিজেই ঘোষণা করেছেন ।

আল্লাহ সুবহানওয়া তা’আলা বলেনঃ

لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا

“যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর (সা) মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” -(সূরা আহযাবঃ আয়াত ২১)
.
রসূলুল্লাহ (সা) বলেন,
“আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে; কিন্তু সে নয় যে অস্বীকার করবে ।” জিজ্ঞেস করা হলো, “হে আল্লাহর রাসূল! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে ?” তিনি বলেন, “যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে ।” – [বুখারী: ৭২৮০; মুসলিম: ১৮৩৫]
.
আর রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাদের বুঝার সুবিধার্তে বিভিন্ন আদেশ ও উপদেশে মাধ্যমে তা আরো স্পষ্ট করে গেছেন । আর সুসংবাদ দিয়ে গেছেন জান্নাতী হওয়ার যোগ্য মানুষদের । তেমনি একটি সুসংবাদ সাত শ্রেণীর মানুষের জন্য, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের (সা:) প্রতি ঈমান এনে ইসলামকে ভালোবেসেছেন, ইসলামকে জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করেছেন। 
তারা হলেন:
(১) ন্যায়পরায়ণ শাসক । 
(২) সেই যুবক যে আল্লাহর ইবাদতে বড় হয়েছে । 
(৩) সেই লোক যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, সেখান থেকে বের হয়ে আসার পর তথায় ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত । 
(৪) এমন দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পরকে ভালবাসে। আল্লাহর ওয়াস্তে উভয়ে মিলিত হয় এবং তাঁর জন্যই পৃথক হয়ে যায়। 
(৫) এমন ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দুই চক্ষু অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে। 
(৬) এমন ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী আহবান করে আর সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং 
(৭) যে ব্যক্তি গোপনে দান করে। এমনকি তার বাম হাত জানতে পারে না তার ডান হাত কি দান করে। -[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭০১]
.
আর আমার প্রভু আরও আশ্বস্ত করে বলেন:

جَزَاؤُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۖ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ
“তাদের পালন কর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্যে, যে তার পালনকর্তাকে ভয় করে।” -(সূরা আল-বাইয়্যেনাহ, আয়াত: ৮)
.
সুতরাং ইসলাম আমার স্বপ্নকে অন্তঃদৃষ্টিতে উপলব্ধি করার সুযোগ দিলো । আমার মধ্যে যেন এক উষ্ণ অনুভুতির সঞ্চার করলো । যা আমার প্রতিটা মূহর্তকে আমার প্রভুর আনুগত্যের মধ্যে কাটিয়ে দেওয়ার প্রেরণা দেয় । সত্যিই ইসলাম পেরেছে, আমার মতো নিরামিষ ছেলেটার মধ্যেও ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পেরেছে (আলহামদুলিল্লাহ)। 
.
আর এই ভালোবাসার অনুভূতি কারো পক্ষে তাঁর প্রভু ব্যতীত অন্য কাউকে পুরোপুরি বুঝানো কখনো সম্ভব নয় । কারণ এই ভালোবাসাতো কেবল তাঁর প্রভুর জন্যই সৃষ্ট । আর এজন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি আমার প্রভুর মনোনীত একমাত্র দ্বীন ‘আল-ইসলামের’ প্রতি। যে আমার স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় সকল দিকনির্দেশনা দিয়েছে, যে আমাকে স্বপ্নের জগতে জ্ঞান হারাতে না দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে দিয়েছে এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবের চেয়ে আরো বেশি নিশ্চয়তা দিয়েছে । আর এই ইসলামই আমার স্বপ্নপূরণের একমাত্র পাথেয় হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88