দল, ইমারত ও বায়আত সম্পর্কে উলামাগণের বক্তব্য (পর্ব ৭)

দল, সংগঠন, ইমারত ও বায়‘আত সম্পর্কে বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের বক্তব্য (সপ্তম পর্ব)

সিরিয়ার প্রসিদ্ধ আলেম শায়খ আদনান ইবনে মুহাম্মাদ আল-আরউর([1])

বৈধ ঐক্যবদ্ধতা এবং নিষিদ্ধ দলাদলির মধ্যে পার্থক্য: যেহেতু পারস্পরিক সহযোগিতা শরী‘আতে বৈধ; বরং ওয়াজিব। আর পারস্পরিক এই সহযোগিতার জন্য কখনো কখনো দলবদ্ধ হওয়ার এবং দলবদ্ধ লোকগুলিকে পরিচালনার প্রয়োজন পড়ে, সেহেতু এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেরে মধ্যে তালগোল পাকিয়ে গেছে। ফলে তারা বৈধ ঐক্যবদ্ধতা এবং নিষিদ্ধ দলাদলিকে একাকার করে ফেলেছে। তারা নিষিদ্ধ দলাদলির বৈধতা প্রমাণ করতে গিয়ে বৈধ ঐক্যবদ্ধতার পক্ষের দলীলগুলিকে পেশ করেছে। যেমন: মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ ۞وَمَا كَانَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لِيَنفِرُواْ كَآفَّةٗۚ فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞ لِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوۡمَهُمۡ إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ ١٢٢ ﴾ [التوبة: ١٢٢] 

      ‘তাদের প্রত্যেকটি বড় দল হতে এক একটি ছোট দল দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের জন্য এবং ফিরে এসে নিজ কওমকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য কেন বের হলো না, যাতে তারা (আল্লাহ্‌র আযাব থেকে) বেঁচে থাকতে পারে’ (আততাওবাহ ১২২) তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿ وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ ﴾ [ال عمران: ١٠٤] 

  ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ, যারা কল্যাণের পথে মানুষকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। (আলে ইমরান ১০৪)

বস্তুত এসব দলীল কস্মিনকালেও দলাদলি বৈধ করে না; বরং সৎকাজ ও কল্যাণের ব্যাপারে দলবদ্ধ হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি প্রমাণ করে। মনে রাখতে হবে, নতুন নতুন দল ও সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা, যেগুলির রয়েছে বিশেষ নিয়ম-শৃংখলা, বিশেষ সভা-সম্মেলন এবং নিজস্ব নানান সব সিদ্ধান্ত আর তাদের ও অন্য মুসলিমদের মধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধকতার নানা দেওয়াল; সেগুলোর মধ্যে এবং সৎকাজের ব্যাপারে সংঘবদ্ধ হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে ঢের তফাৎ। কারণ বৈধ ঐক্যবদ্ধতা বিশেষ কোনো নিয়ম-শৃংখলার মাধ্যমে অন্যান্য মুসলিম থেকে আলাদা হয়ে যায় না এবং ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ ও তাদের মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে না। নীচে বৈধ ঐক্যবদ্ধতা এবং নিষিদ্ধ দলাদলির মধ্যে কতিপয় পার্থক্য তুলে ধরা হলোঃ

প্রথম পার্থক্য: বৈধ ঐক্যবদ্ধতার পক্ষের লোকজনের মৌলিক বিষয় হচ্ছে দলীল, যে কোনো বিষয়ে সবকিছুর উপর দলীলটাই তাদের কাছে প্রাধান্য পায়।

পক্ষান্তরে, নিষিদ্ধ দলাদলির ক্ষেত্রে দল বা দলপ্রধানের অন্ধভক্তিই মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এসব দলের লোকজনদের নিকট শর‘ঈ দলীল এবং দল ও দলপ্রধানের নির্দেশনা একাকার হয়ে যায়। সেজন্য দলীয় নির্দেশনা বিনষ্ট এবং দলপ্রধানের গোঁমর ফাঁস হওয়ার ভয়ে তারা অনেক ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ্‌র বক্তব্য এবং সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি প্রত্যাখ্যান করে চলে।

দ্বিতীয় পার্থক্য: বৈধ ঐক্যবদ্ধতা শরী‘আতের মূলনীতির নিরীখে গোটা মুমিন সম্প্রদায়ের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। এই ঐক্যবদ্ধতা মুমিনদের মাঝে কোনো প্রকার বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে না।

পক্ষান্তরে, অন্যান্য মুমিনদের বাদ দিয়ে দলাদলির লোকদের নিজেদের মধ্যে এক বিশেষ সম্প্রীতি গড়ে উঠে। শুধু তাই নয়; বরং তারা দলাদলিকেই আন্তরিকতা সৃষ্টি এবং শত্রুতা পোষণের মানদণ্ড হিসাবে গ্রহণ করে। সেজন্য তাদের নিকটে মুমিনরা পরস্পরে মিত্র না হয়ে দলের লোকজন হয় পরস্পরের মিত্র।

তৃতীয় পার্থক্য: বৈধ ঐক্যবদ্ধতার কারণে তাদের মধ্যে এবং অন্যান্য মুসলিমদের মধ্যে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতার দেওয়াল রচিত হয় না; বরং এই ঐক্যবদ্ধতার মহান উদ্দেশ্যই হচ্ছে সুবিন্যস্তভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি নিশ্চিত করা।

পক্ষান্তরে, নিষিদ্ধ দলাদলির ক্ষেত্রে দলের লোকজনদের মধ্যে এবং অন্যান্য মুসলিমদের মধ্যে রচিত হয় পার্থক্যের দেওয়াল ও সীমারেখা। সেজন্য তাদের সাথে কাজ করতে চাইলে অনুমতি ছাড়া সম্ভব হয় না। আবার তাদের দল থেকে বের হয়ে আসতে চাইলেও অনুমতি নিতে হয়, অন্যথায় বহিষ্কৃত হয়ে চলে আসতে হয়।

চতুর্থ পার্থক্য: বৈধ ঐক্যবদ্ধতা নির্দিষ্ট যরূরী কোনো প্রয়োজনের তাকীদে হয়ে থাকে। যেমন: মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মসজিদ নির্মাণ, কূপ খনন, মুসলিমদের বিশেষ তত্ত্বাবধান ইত্যাদি।

পক্ষান্তরে, নিষিদ্ধ দলাদলির ক্ষেত্রে প্রত্যেকে নিজের দলকে পূর্ণাঙ্গ ইসলাম মনে করে। সে আরো মনে করে, তার দল স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং মুখাপেক্ষীহীন।

পঞ্চম পার্থক্য: মুসলিমদের বিশেষ কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতাস্বরূপ বৈধ ঐক্যবদ্ধতা হয়ে থাকে। সেজন্য এই ঐক্যবদ্ধ লোকগুলি পরস্পর পরস্পরের সহযোগী হয়ে থাকে। তারা একে অন্যকে সাহায্য করে এবং একে অন্যের দ্বারা শক্তি সঞ্চার করে; ঠিক যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনরা নির্মিত ভবনের মত, যার একাংশ অন্য অংশের সাথে শক্তভাবে গাঁথা’।

পক্ষান্তরে দলাদলির লোকেরা পরস্পর সহযোগী না হয়ে বিবদমান হয়, সহানুভূতিশীল না হয়ে হানাহানিতে মত্ত থাকে। ‘এসব দল যেন পরস্পর সতীনের মত’।

ষষ্ঠ পার্থক্য: বৈধ ঐক্যবদ্ধতার লোকগুলি অন্যদের বাদ দিয়ে তাদের নিজেদের বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য আছে বলে মনে করে না; বরং তারা মুসলিম উম্মাহ্‌রই অংশ এবং মুসলিম উম্মাহ্‌র খেদমতেই নিয়োজিত।

পক্ষান্তরে, দলীয় লোকেরা অন্যদের বাদ দিয়ে শুধু নিজেদেরকে উম্মত মনে করে। কোনো কোন দলের লোকেরা নিজেদেরকে মুসলিম উম্মাহ মনে না করে মুসলিমদের একটি জামা‘আত মনে করলেও তারা নিজেদেরকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ভাবে। তবে যেসব দলের লোকেরা নিজেদেরকে মুসলিম উম্মাহ মনে করে, তারা স্পষ্ট পথভ্রষ্ট এবং তাদের এহেন বিশ্বাস ভয়ানক বিপদই বটে।

সপ্তম পার্থক্যসর্বদা বৈধ ঐক্যবদ্ধতার লোকজনদের প্রত্যাবর্তনস্থল হয় কুরআন-সুন্নাহ, সালাফে ছালেহীনের সরল পথ হয় তাদের পথ এবং শরী‘আতের বিজ্ঞ আলেমগণ যেখানকারই হোক না কেন তাঁরাই হন তাদের নেতা।

পক্ষান্তরে, নিষিদ্ধ দলাদলির লোকদের ক্ষেত্রে দলাদলিই হয় তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল এবং দলের নেতারাই হয় তাদের নেতা।

মোদ্দাকথা: বৈধ ঐক্যবদ্ধতা মুসলিমদের পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতি এবং একতা বৃদ্ধি করে। ফলে তারা মুসলিম উম্মাহ্‌র খেদমতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।

কিন্তু নিষিদ্ধ দলাদলি মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে বিভক্তি, অন্ধভক্তি, হানাহানি, দুর্বলতা এবং ব্যর্থতা বৃদ্ধি করে। কারণ তারা মুসলিমদের কাতারে বিভিন্ন দলের জন্ম দেয়। প্রত্যেকটি দল নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ জ্ঞান করে, নিজের যা আছে, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে এবং অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে।([2])

তিনি শপথ, চুক্তি ও অঙ্গীকার সম্পর্কে বলেন, …রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামে নতুন কোনো চুক্তি নেই। জাহেলী যুগের ভাল চুক্তিগুলিকে ইসলাম আরো সুদৃঢ় করেছে (ছহীহ মুসলিম, হা/২৫২৯) উক্ত হাদীছে নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর নির্দিষ্ট কতিপয় শর্তের উপরে অন্যদেরকে বাদ দিয়ে সংঘবদ্ধ হওয়াকে চুক্তি (হিল্‌ফ) বলা হয়েছে। এসব চুক্তি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে চুক্তিতে অংশগ্রহণকারীদের কল্যাণ বয়ে আনে। জাহেলী যুগে দেখা যেত, কিছু লোক অন্যদেরকে বাদ দিয়ে নিজেরা একত্রিত হত এবং অত্যাচারিত ও অসহায়কে সাহায্যের জন্য শপথ ও চুক্তি করত। যেমন: হিলফুল ফুযূল। কিন্তু পরবর্তীতে ইসলাম এসব চুক্তি হারাম করে।

কেউ প্রশ্ন করতে পারে, ভালকাজের একটি চুক্তিকে ইসলাম কিভাবে হারাম করতে পারে?! এর জবাব হাদীছের দ্বিতীয়াংশে বলে দেওয়া হয়েছে, ‘জাহেলী যুগের ভাল চুক্তিগুলিকে ইসলাম আরো সুদৃঢ় করেছে’। অর্থাৎ জাহেলী যুগে যেসব ভাল চুক্তি ছিল, ইসলাম সেগুলোর চেয়েও উত্তম জিনিস নিয়ে এসেছে। তা হচ্ছে, গোটা মুসলিম উম্মাহ যেহেতু ইসলামী ভ্রাতৃত্বের মহান চুক্তির সদস্য, সেহেতু সেখানে ডানে-বামে, গোপনে বা প্রকাশ্যে আর কোনো চুক্তির আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। কেননা অন্যান্য সব চুক্তি মুসলিম উম্মাহকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলে এবং তাদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষের আগুন প্রজ্জ্বলিত করে। দ্বিতীয়তঃ যেহেতু মুমিন সম্প্রদায় সবাই ইসলামের রশি ধরে কল্যাণের পথে একটিমাত্র চুক্তিতে একটিমাত্র উম্মতে পরিণত হয়েছে, সেহেতু এখানে অন্য কোনো চুক্তির প্রয়োজন আছে কি?! অতএব, যে ব্যক্তি অন্যান্য চুক্তির আহ্বান জানাবে –যদিও তা কল্যাণের উপর হয়-, সে মুসিলম উম্মাহকে বিভক্ত করে ফেলবে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَإِنَّ هَٰذِهِۦٓ أُمَّتُكُمۡ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ وَأَنَا۠ رَبُّكُمۡ فَٱتَّقُونِ ٥٢ فَتَقَطَّعُوٓاْ أَمۡرَهُم بَيۡنَهُمۡ زُبُرٗاۖ كُلُّ حِزۡبِۢ بِمَا لَدَيۡهِمۡ فَرِحُونَ ٥٣ ﴾ [المؤمنون: ٥٢،  ٥٣] 

    ‘তারা সকলেই তোমাদের ধর্মের; একই ধর্মে তো বিশ্বাসী সবাই এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা আমাকেই ভয় কর। অতঃপর মানুষ তাদের বিষয়কে বহুধা বিভক্ত করে দিয়েছে। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত হচ্ছে’। (আলমুমিনূন ৫২৫৩)([3])

 আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান আল-গুদাইয়ান([4])

এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ইতিপূর্বে এ দেশে (সঊদী আরব) সংগঠন নামে কোনো কিছুই ছিল না। কিন্তু বিভিন্ন দেশ থেকে যখন বিভিন্ন পেশার মানুষ আসা শুরু হলো, তখন তারা নিজ নিজ দেশে বিদ্যমান সংগঠনগুলি এখানে প্রতিষ্ঠা করল। জামা‘আতে ইসলামী, তাবলীগ জামা‘আতসহ অসংখ্য সংগঠন রয়েছে, যারা মানুষদের নিজ সংগঠনে যোগদানের আশা করে। অন্যদিকে, তারা লোকদের অন্য সংগঠনে যোগদানকে হারাম গণ্য করে। শুধু তাই নয়, প্রত্যেকেই নিজ সংগঠনকে হক মনে করে এবং অন্য সংগঠনকে বিভ্রান্ত বলে ধারণা করে। এক্ষণে প্রশ্ন হলো, হক কয়টি? উত্তরে বলব, হক একটি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের বিভক্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সকলেই জাহান্নামে যাবে’। ছাহাবীগণ উক্ত নাজাতপ্রাপ্ত দল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাদের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘যারা আমি ও আমার ছাহাবীরা আজ যে পথে আছি, সে পথে পরিচালিত হবে’।

প্রত্যেকটি সংগঠন স্বতন্ত্রভাবে কর্মপদ্ধতি ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে এবং প্রত্যেকটি সংগঠনের একজন করে দলপ্রধান নিযুক্ত হয় আর দলপ্রধান তার কর্মীদের কাছ থেকে বায়‘আত গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, সংগঠনের কর্মীরা কেবলমাত্র নিজেদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। এভাবে প্রত্যেকটি দল প্রতিপক্ষের সাথে শত্রুতা পোষণ করে চলে। এক্ষণে, এ দলাদলিকে আমরা কি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত বলব? কখনই না, এটি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। কারণ, দ্বীন একটি, হক একটি এবং আমরা একই নবীর উম্মত। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ﴾ [ال عمران: ١١٠] 

 ‘তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত’ (আলে ইমরান ১১০) উক্ত আয়াতে তিনি বলেননি যে, তোমরা বিভক্ত জাতি; বরং বলেছেন, সর্বোত্তম জাতি।

মূলতঃ এ সংগঠনগুলি এদেশে এসে এখানকার পরিবেশ নষ্ট করেছে। তারা বিশেষভাবে যুবকদেরকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেছে। যারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত, তাদেরকে তারা টার্গেট করে না; বরং মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদের প্রধান টার্গেট। ইদানীং মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও জামা‘আতে ইসলামী ও তাবলীগ জামা‘আতের লোকেরা তাদের দা‘ওয়াতী কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রশ্ন হল, এমন প্রেক্ষাপটে একজন মুসলিম কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেখানো পথ অনুসরণ করবে নাকি মিসরী ও ভারতীয় ব্যক্তিদ্বয়ের সাথে থাকবে? আমি বলব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেখানো পথ অনুসরণ কর, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে আঁকড়ে ধর এবং কোনো মাসআলায় জটিলতা দেখা দিলে আলেমদেরকে জিজ্ঞেস কর।([5])

তথ্যসূত্র :

([1]) শায়খ আদনান সিরিয়ার হামা নগরীতে ১৩৬৮ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। শায়খ ইবনে বায, শায়খ আলবানী, শায়খ মুহাম্মাদ হামেদ প্রমুখ জগদ্বিখ্যাত উলামায়ে কেরামের নিকটে তিনি শিক্ষা অর্জন করেন। সিরিয়ার বড় বড় আলেমগণের মধ্যে তাঁর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শীআদের সাথে বাহাছ-মুনাযারা করে এবং তাদের গোঁমর ফাঁস করে দিয়ে ইতিমধ্যে তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর গ্রন্থসমূহের মধ্যে ১. আত-তা’মীন বায়নাত-তাশদীদি ওয়াত-তাসহীল, ২. আস-সাবীলু ইলা মানহাজি আহলিস-সুন্নাহ ওয়াল-জামা‘আহ, ৩. ছিফাতুত-ত্বয়েফাতিল মানছূরাহ, ৪. জামেউস-সুন্নাহ সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। শেষোক্ত গ্রন্থটি ৪০ খণ্ড পর্যন্ত পৌঁছেছে, এটি প্রণয়নের কাজ এখনো শেষ হয়নি।

([2]) নিম্নোক্ত লিঙ্ক থেকে ১০/১২/২০১২ তারিখ সকাল ১১:১৬ টায় সংগৃহীত:

http://majles.alukah.net/showthread.php?50510-%D8%A7%D9%84%D8%AD%D8%B2%D8%A8%D9%8A%D8%A9-%D8%A3%D9%86%D9%88%D8%A7%D8%B9%D9%87%D8%A7-%D8%8C-%D9%88%D8%A3%D8%AD%D9%83%D8%A7%D9%85%D9%87%D8%A7-%D9%84%D9%84%D8%B4%D9%8A%D8%AE-%D8%B9%D8%AF%D9%86%D8%A7%D9%86-%D8%B9%D8%B1%D8%B9%D9%88%D8%B1

([3]) নিম্নোক্ত লিঙ্ক থেকে ১০/১২/২০১২ তারিখ সকাল ১১:১৬ টায় সংগৃহীত:

http://majles.alukah.net/showthread.php?50510-%D8%A7%D9%84%D8%AD%D8%B2%D8%A8%D9%8A%D8%A9-%D8%A3%D9%86%D9%88%D8%A7%D8%B9%D9%87%D8%A7-%D8%8C-%D9%88%D8%A3%D8%AD%D9%83%D8%A7%D9%85%D9%87%D8%A7-%D9%84%D9%84%D8%B4%D9%8A%D8%AE-%D8%B9%D8%AF%D9%86%D8%A7%D9%86-%D8%B9%D8%B1%D8%B9%D9%88%D8%B1

([4]) শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুর রাযযাক আল গুদায়য়ান ১৩৪৫ হিজরীতে যুলফী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ শহরে তাওহীদ, নাহু, ফারায়েয প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা লাভের পর রিয়াদে এসে পড়াশুনা শেষ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকমণ্ডলীর মধ্যে রয়েছেন, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম (সঊদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী), শায়খ সঊদ ইবনে রশুদ (রিয়াদ আদালতের বিচারক), শায়খ আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বায প্রমুখ আলেমগণ। তিনি খোবার আদালতের বিচারক হিসাবে নিয়োগ পান। পরে সঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদ এবং সরকারী ফৎওয়া বোর্ডের‌ সদস্য নির্বাচিত হন। রেডিও, টেলিভিশন সহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ রয়েছে।

([5]) ‘ফাতাওয়াল উলামা ফিল জামা‘আত’ ক্যাসেট থেকে সংগৃহীত, মিনহাজুস সুন্নাহ রেকর্ডিং সেন্টার, রিয়াদ।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88